জাকারিয়া আলফাজ,টেকনাফ :
সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’র প্রকাশিত ফলাফলে টেকনাফ উপজেলায় গত দুই বছরের তুলনায় এবারে পাশের হার ও জিপিএ-৫ উভয়টি কমেছে। এবছর এসএসসি পরীক্ষায় টেকনাফের ১৪ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে ১২৭০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৯৯০ জন। অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০ জন এবং পাশের হার ৭৭.৯৫। গতবছর ২০১৭ সালের পাশের এ হার ছিল ৮৬.৭৪ এবং ২০১৬ সালে ৯২। সে হিসেবে এবারে টেকনাফে পাশের হার গত দুই বছরের তুলনায় কমেছে। তবে অনেকটা নি¤œমূখী ফলাফলেও টেকনাফের সুনাম বৃদ্ধি করেছে সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়। এসএসসির ফলাফলে কক্সবাজার জেলার শতভাগ পাশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের শতভাগ পাশের ২৭ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১ তম স্থানেই রয়েছে।
এদিকে পাশের হার কমার পাশাপাশি সীমান্ত শহর টেকনাফে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবছর টেকনাফের ১৪ টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্টানের মধ্যে জিপিএ-৫ শূণ্য ৮ টি প্রতিষ্ঠান। ৬ প্রতিষ্টান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২১ জন শিক্ষার্থী। গতবছর ৯ শিক্ষাপ্রতিষ্টান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৮ জন শিক্ষার্থী। গতবারের তুলনায় ৭ শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ কমেছে। তবে ২০১৬ সালে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১১ জন।
জিপিএ-৫ পাওয়া প্রতিষ্ঠান গুলো হলোর মধ্যে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ৪ জন, সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয় ২ জন, হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয় ৬ জন, টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৪ জন, শাহপরীর দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয় ২ জন, শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ৩ জন। এছাড়া উপজেলার ৮ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ জিপিএ-৫ পায়নি।
এদিকে ২ শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ প্রাপ্তিসহ শতভাগ পাশ করিয়ে পাশের হারে উপজেলার শীর্ষে রয়েছে সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়। সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭৬ শিক্ষার্র্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সবাই পাশ করেছে। উপজেলায় এ একটিমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের হার শতভাগ। পাশের হারে উপজেলায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে একই ইউনিয়নের নোয়াপাড়া আলহাজ্ব নবী হোছাইন উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্টান থেকে ৭৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে পাশ করেছে ৭২ জন, তবে জিপিএ-৫ পায়নি কেউ। এ প্রতিষ্ঠানের পাশের হার ৯৬, গতবছর এ হার ছিল ৯৩.৬২। পাশের হার বিবেচনায় উপজেলায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে টেকনাফ এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের ৬৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬০ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন, পাশের হার ৯৩.৭৫, গতবারে পাশের হার ছিল ৮০.৮৫।
এছাড়া সার্বিক ফলাফলে হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৫৮ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ জন, পাশের হার ৮৭.২৯, গতবছরের পাশের হার ছিল ৯০.১৭, শাহপরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৪৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন, পাশের হার ৮৪.৫৬, গত বছর ছিল ৯৪.৪৪, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৫১ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন, পাশের হার ৮৩.৪৩, উপজেলা সদরের এ বিদ্যালয়টির গত বছরের পাশের হার ছিল ৮৭.১০, লম্বরী মলকা বানু উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮৯ জনে পাশ করেছে ৬৮ জন, পাশের হার ৭৬.৪০, গতবছরের হার পাশের হার ছির ৮৬.২৭, শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৫৩ জনে পাশ করেছে ১১০ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন, ফেল করেছে ৪৩ জন, পাশের শতকরা হার ৭১.৯০, গতবছরের পাশের হার ছিল ৬৯.৩৯, নয়াবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৮৯ জন, পাশের শতকরা হার ৭০.০৮, গতবারের পাশের হার ছিল ৮৬.৮২।
অন্যদিকে গতবারের শতভাগ পাশ করা শিক্ষা প্রতিষ্টান হোয়াইক্যং আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এবারের ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। এ বিদ্যালয় থেকে ১০২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে মাত্র ৬৫ জন, পাশের হার ৬৩.৭৩। এছাড়া কাঞ্জরপাড়া নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ৩৫ জন, পাশের হার ৬৩.৬৬, গতবছর এ বিদ্যালয়ের পাশের হার ছিল ৭১.১১, হ্নীলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩০ জন, পাশের হার ৫৫.৫৬, গতবছর এ হার ছিল৭২.৫৫, গতবছরের শতভাগ পাশ আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্টান মারিশবনিয়া এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে এবার ফল বিপর্যয় হয়েছে। এ বিদ্যালয় থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১০ জন, পাশের হার ৫৫.৫৬। এবারের এসএসসি’র ফলাফলে তলানিতে রয়েছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন্সের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সেন্টমার্টিন বিএন ইসলামিক উচ্চ বিদ্যালয়। এবারের এসএসসিতে ৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৭ জন, পাশের হার ৪৫.৯৫, গত বছর এ প্রতিষ্টানের পাশের হার ছিল ৯৫।
ফলাফলের বিষয়ে টেকনাফের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্টান জেলার একমাত্র শতভাগ পাশের দাবিদার সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ-উদ-দৌলা দৈনিক আজকের দেশবিদেশকে বলেন, সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা পুরো কক্সবাজার জেলায় শতভাগ পাশের কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এ অর্জন আমার শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। আগামীতে আমরা আরো ভালো সাফল্য অর্জন করতে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশী।
ফলাফলের বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার জানান, উপজেলায় এসএসসিতে পাশের হার ৭৭.৯৫, জিপিএ -৫ পেয়েছে ২১ শিক্ষার্থী। তবে ফলাফলে পাশের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবছরের তুলনায় কমেছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।