রশীদ আহমেদ চৌধুরী
বাংলাদেশের বলীখেলার সর্ববৃহৎ বলীখেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বার বলি খেলা। বাংলা ১৩১৫ সনের ১২ই বৈশাখ সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানে এই বলি খেলার আসর বসে। সেই থেকে এই ঐতিহাসিক লোকজ আয়োজন ১শত ১০ বছরে পর্দাপন করল। তৎকালীন বৃটিশ ওপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় তরুনদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা, দেশপ্রেম, শৃংঙ্খলাবোধ জাগ্রত করে একটি ব্যপক ভিত্তিক, শক্তিশালী গণ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। যেহেতু তখন অন্য কোন ভাবে গণ জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। লাল দিঘীর মাঠে এই বলি খেলার সংগ্রামী আয়োজক ছিলেন বদর পাতি এলাকার ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জনাব আবদুল জব্বার। এই বলি খেলাকে কেন্দ্র করে যুবসমাজ তথা সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে। এরপর কর্ণফুলির পানি অনেক গড়িয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম তিব্রতর ও যোক্তিক পরিনতিতে বৃটিশরা এই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। যে চিন্তা ও চেতনাকে সামনে রেখে এই লোকজ সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞের আয়োজন শুরু হয়েছিল তা অধ্যাবদি বহাল আছে। সময় যথ গড়াচ্ছে এই মেলার ব্যপ্তি ও উজ্বলতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের মূল কেন্দ্রস্থল লাল দিঘীর পাড়, আন্দরকিল্লা, বকসির বিট, হাজারী গলি, কোতোয়ালীর মোড়, আলকরণ ও নিউমার্কেট চত্বর সব এলাকায় চারু, কারু, কুটিঁর শিল্প পণ্য ও খেলনা পণ্যের পসরা বসে। যা মাতিয়ে রাখে চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজের লোকজনকে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের আশেপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাবসায়ি ও সাধারণ লোকজন চট্টগ্রামে ছুটে আসে। আশেপাশের উপজেলার ছেলেমেয়েরা শহরে অবস্থিত আত্মিয়ের বাসায় বেড়াতে আসে। বিদেশে অবস্থানরত চট্টগ্রাম বাসী গন এই সময় নাড়ীর টানে ছুটে আসে। এক কথায় লোকপণ্য, লোক জীবন ও লোক সাংস্কৃতির অসামান্য ও কাল উত্ত্বির্ণ স্মারক হয়ে উঠেছে এই বৈশাখী মেলা। স্থানীয় জনজীবন ও জাতীয় জীবনে আলোড়ন তুলেছে এই মেলা। নগর ও গ্রামের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সম্পর্কের মেলবন্ধন গড়ে তুলেছে। মানুষে মানুষে সমপ্রীতির এক প্রাণময় আবহ তৈরি করে এই মেলা। সামাজিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ, মাদকাসক্তি, চান্দাবাজি, টেন্ডারবাজী, খুন, ধর্ষণ ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে এই মেলার আবেদন সার্বজনীন। আমাদের লোকমেলা, লোকউৎসব, নান পণ্যের সমাহার ইত্যাদি আমাদের ইতিহাস, আবেগ ও প্রাচীন ঐতিহ্যকে প্রাণময় করে তোলে এই মেলা। বিশ্বের অনেক কিছু যেমন পুরাকির্তি, প্রাচীন স্থাপত্য, চারুকারু শিল্প, সঙ্গীত, ভাষণ, বন ও হাউর ইত্যাদি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা ভুক্ত হচ্ছে। আমাদের দাবী জব্বার বলি খেলাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হোক।
লেখক: রশীদ আহমেদ চৌধুরী, কর আইনজীবি ও চেয়ারম্যান- উপকূলীয় ফাউন্ডেশন।