সিবিএন ডেস্ক:

কোটা বাতিল এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনও কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’

 

st-03

প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথাও বলেছেন। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘আমি অপেক্ষায় আছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেভাবে অগ্রসর হতে বলবেন আমি সেভাবে বাকি কাজ করব।’

এখন এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হবে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হয়তো হবে কিন্তু সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি বলছি, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশনার জন্য প্রস্তুত আছি।’

সব চাকরিতেই কি প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কার্যকর হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সেটি আমরা যখন প্রজ্ঞাপন জারি করব তখন হয়তো আরও বিশ্লেষণ করে পরিষ্কার করব। সেটি সরকারপ্রধান থেকে সুস্পষ্ট পরামর্শ ও নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

কবে প্রজ্ঞাপন জারি হবে- এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘এটা এখন জরুরি নয়, কারণ এখন কোনো নিয়োগ হচ্ছে না। কাজেই আমরা যদি একটু সময় নেই তাতে দেশের ক্ষতি হবে না।’

 

st-02

কোটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল– এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা সব সময় পরীক্ষার কাজ করি। সরকারি দফতর থেকে একটা কিছু বের হলে সেটা নিয়ে কেউ কথা বললে আরেকবার দেখি- কী কাজটা হলো, কেন কথাটা উঠেছে। সেটা চলছে, এখনও আমরা দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন যেভাবে হয়েছিল, তাতে ৭ তারিখ (মে মাসের) পর্যন্ত আল্টিমেটাম ছিল, তারপর আবার নতুন করে আন্দোলন হয়েছে। ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন ঘোষণাটা দেয়া জরুরি, তাই দিয়েছেন।’

‘আমি মনে করি পরবর্তী কাজ হলো, এখন আমাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা। সেটা হলেই আমরা করে ফেলব।’

অনেকে জানতে চাচ্ছেন, শুধু বিসিএসের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা বাতিল হলো কিনা- এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এখানে টেকনিক্যাল অনেক ব্যাপার আছে। আপনাদের এগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। গত রোববার কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা শাহবাগের সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়। রোববার রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। উপাচার্যের বাসভবনের ভেতর তছনছ এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।

গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে বসেন। বৈঠকে কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে- এ আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা মঙ্গল ও বুধবারও আন্দোলন চালিয়ে যান।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এ অবস্থায় বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রথমবারের মতো সরাসরি কথা বলেন। সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতিই বাতিল।’