ডেস্ক নিউজ:
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের যে অভিযাত্রা, তাকে আপাতত চ্যালেঞ্জের মাপকাঠিতেই মূল্যায়ন করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাত এখনও বিরাজমান। উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, যে কাঠামো বাংলাদেশে ক্ষীণ। এমন রাষ্ট্রের পরিচয়ে নতুন আরও কিছু সমস্যা যোগ হবে। এগুলো মোকাবেলা করাই হচ্ছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অতি উল্লাসের কিছু ঘটেছে বলে মনে করি না। সরকার ক্রেডিট নেয়ার জন্য রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতেই পারে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের বাস্তবতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মূল্যায়ন করতে হয় সবকিছু।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে যে যাত্রা করেছে, তা অবশ্যই আমাদের জন্য শুভ সংবাদ। বাংলাদেশের নতুন পরিচয় মিলেছে। দেশ, দেশের নাগরিকের মর্যাদা বাড়বে। ব্যবসা, বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। নানা সুবিধাও মিলবে। কিন্তু আপাতত চ্যালেঞ্জকেই আমলে নিতে হবে। অতি উল্লাসের ফানুসে যেন যাত্রা আটকে না যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও একই প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, আমাদের যে গন্তব্যের দিকে যাত্রা, তা অবশ্যই আশার আলো জাগিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের যে ফর্ম চলে আসছে বহুদিন ধরে, সেটার একটি স্বীকৃতি মিললো। এই স্বীকৃতি আমার জীবনমানকে আরও উন্নত করবে। সম্মান এনে দেবে। কিন্তু আনন্দ যাত্রায় উল্লাস করে চ্যালেঞ্জগুলো ভুলে গেলে চলবে না। অনেক সুবিধা আসবে বটে, কিন্তু অসুবিধাও অনেক। শর্তও থাকছে অনেক।
চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। রফতানি আয় বাড়ছে না। অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সও বাড়ছে না। মানব সম্পদের উন্নয়ন নেই। শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন নেই। বেকার, শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। চার কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে। আয়-বৈষম্যও বাড়ছে। এই সমস্যাগুলো আমাদের চলমান চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশের ঘোষণা আসায় শুল্কমুক্ত সবিধা না পাওয়া এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলো নতুন করে যোগ হবে।
তিনি বলেন, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই একটি দেশের মাপকাঠি নির্ধারণ করা সম্ভব না। রাজনীতি, গণতন্ত্র, সুশাসনকেও আমলে নিতে হবে।
অর্থনীতিবিদ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশের অগ্রযাত্রায় যে সমস্যাগুলো সামনে আসবে, তা তিনটি সূচকে নিরুপণ করতে হবে। মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও ভঙ্গরতা। এই সূচকগুলোতেই আপাতত আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারছি কি-না, তার জন্য দুই ধাপে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এখনও আমাদের প্রধান সমস্যা। মানব সম্পদ উন্নয়ন নিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা ইতিবাচক নয়। ব্যবসায়িক সুবিধা, বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে আমরা কি করছি, সেটাও দেখার বিষয়। বরং উন্নয়নশীল দেশের পরিচয় মেলায় আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো আরও শক্ত হয়ে আসলো।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।