সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও :

ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেড়ে গেছে প্রতিহিংসা। প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো অনলাইন গণমাধ্যমে আপলোড করে প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। তারই মাঝে চুলকানি শুরু হয় কিছু মানুষের। সমালোচনার ঝড় তোলে যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। দোষ চাঁপায় সাংবাকিদের ওপর।

রাষ্ট্রের প্রতি যে পেশাগত অঙ্গীকার সাংবাদিকদের তা পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে গেলেই বাঁধা আসে। জাতির বিবেকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়া সাংবাদিকের দায়িত্ব। স্বার্থ সংশ্লিষ্টের বিপক্ষে কাজ করতে হলে সাংবাদিকদের সংঘবদ্ধ শক্তির প্রয়োজন। কোনো কারণেই সাংবাদিকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি কাম্য নয়। এ মুহূর্তে দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে সাংবাদিকদের ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

হরহামেশা সাংবাদিক নির্যাতিত হচ্ছে তেমন কোন বিচারও হচ্ছে না। ফলে ভুক্তভোগি সাংবাদিকরাও রয়েছে হতাশায়। সাংবাদিক নির্যাতনের ৫৭ ধারা বাতিল করে ফের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ৩২ ধারা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্তির বিধান রেখে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ খসড়ার ৬২ ধারায় বলা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারার বিলুপ্তি হবে।

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টিও হয়েছে। বিশেষ করে আইনের ৩২ ধারাটি স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বাধা হবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা।

৩২ ধারা সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত পেশাজীবীদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্তির ঘোষণা হলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় আইসিটি আইনের অনুরূপ বক্তব্য যুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যে বিকাশ সে জায়গায় অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভেতরে এমন বিধান, নিয়মকানুন সংযুক্ত করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে মুক্ত সাংবাদিকতা বলতে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

সাংবাদিকতা খুব বড় ভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাস্তবায়ন হলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্থ হবে, বিষয়টি এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে একটি দুর্নীতির রিপোর্ট যদি করতে হয় তাহলে দুর্নীতিবাজের কাছে একজন সাংবাদিককে যেতে হবে এবং তাকে গিয়ে বলতে হবে যে আপনি দুর্নীতি করেছেন এবং আপনার দুর্নীতির রিপোর্ট আমাদের দেন।

যদি দুর্নীতিবাজ সাংবাদিককে তথ্য-প্রমাণ দেয়, তাও শুধু মৌখিকভাবে দিলে হবে না। লিখিতভাবে দিতে হবে। যদি দেয় তাহলে সাংবাদিক সেই রিপোর্টটা করতে পারবেন। যদি সে লিখিতভাবে অনুমতি না দেয়, শুধু মৌখিকভাবে অনুমতি দেয় তারপর কোনো সাংবাদিক তথ্য-প্রমাণ নিয়ে এসে লেখেন, তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলা হতে পারে।

তার জন্য ১৪ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। এটা ৫৭ ধারার চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর এবং নিপীড়নমূলক।

সবাই একবাক্যে স্বীকার করে সাংবাদিক হলো জাতির বিবেক। সাংবাদিকরা বিবেকের তাড়নায় নিজের জীবনের সঙ্গে বাজি রেখে সমাজের, রাষ্ট্রের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখেন, সমাজ রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এটাই কি সাংবাদিকদের অপরাধ? সাংবাদিক যদি জাতির বিবেক হয়। তাহলে সাংবাদিক হত্যার বিচার কেন হচ্ছে না!

সাংবাদিকরা জাতির সামনে তুলে ধরেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতার কথা। কিন্তু সেই সাংবাদিকরা তাদের লাঞ্ছনা-বঞ্চনা কার কাছে জানাবেন? প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলছে। ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সাংবাদিকতা। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রায়ই হামলার শিকার হচ্ছেন সংবাদকর্মীরা। সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পড়ে আবার পরিস্থিতির শিকার হয়ে কখনো কখনো অকারণে প্রাণ দিতে হচ্ছে তাদের। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে গণমাধ্যমকর্মীরা আক্রমণের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে।