সিবিএন:
কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া কেজি স্কুলে অভিভাবক নির্যাতনের ঘটনার আসামী মাস্টার বোরহান উদ্দিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
একই মামলার আসামী দপ্তরী নুরুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেছে বিচারক।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এ শুনানি শেষে বিচারক রাজিব কুমার দাশ এ আদেশ দেন।
উচ্চআদালতের দেয়া জামিনের মেয়াদ শেষে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে পুনরায় জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এই মামলার আসামী মাস্টার ওবায়দুল হক ও মিজানুর রহমান জামিনে রয়েছেন। মাস্টার জহিরুল হক ও আবদুল আজিজ পলাতক।
গত ৭ জানুয়ারী সকালে খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবিরের ফলাফল জানতে গিয়ে শিক্ষকদের রোষানলে পড়েন অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। তার হাত ও পায়ে রশি বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে পুরো এলাকায়। তোলপাড় হয় বিভিন্ন গণমাধ্যম। নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চিত্রশিল্পী আয়াত উল্লাহ কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকার মাওলানা কবির আহমদের ছেলে।
এ ঘটনায় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ৮ জানুয়ারী কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ভিকটিম আয়াত উল্লাহ। মামলা নং-জিআর ২০/১৮।
মামলার অন্যান্য আসামীরা হলো- দপ্তরী নুরুল হক, মাস্টার ওবাইদুল হক, মাস্টার বোরহান উদ্দিন, মিজানুর রহমান ও আবদুল আজিজ । তবে, ঘটনার অন্যতম হোতা খরুলিয়া স্কুল কমিটির সভাপতি এনামুল হক ও মাস্টার নজিবুল্লাহ ক্ষমতার বাহাদুরিতে মামলা থেকে বাদ পড়ে যায়।
এদিকে একজন অভিভাবকের হাতে পায়ে রশি বেঁধে ব্যাপক মারধর করার ঘটনাটি শুধু কক্সবাজার নয়, বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের নামকরা সব গণমাধ্যমে স্থান পায়। আলোচিত ঘটনা তদন্তে নামে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাবসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন-সংস্থাও ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠায়। সরকারী বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাও ঘটনার বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি জন্ম দেয় এনামুল হক ও নজিবুল্লাহ। এই দুই ব্যক্তির কারণে পুরো শিক্ষক সমাজের গায়ে কলঙ্ক লেগেছে।
ঘটনার অন্যতম এই দুই নায়ককে বাদ দিয়ে মামলা হওয়ায় সর্বস্থরে নিন্দার ঝড় উঠে। তাদের গ্রেফতার করার দাবী সর্বমহলের। তবে, তারা মামলা থেকে বাদ পড়ার পেছনে রাজনৈতিক চাপ ও হুমকি ধমকিও ছিল বলে একটি সুত্র জানিয়েছে।
সবার আওয়াজ একটাই- মূল হোতা এনামুল হক ও মাস্টার নজিবুল্লাহকে আইনের আওতায় আনা হোক। অন্যতায় অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। সাহস পাবে অপরাধীরা।
স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে, ওই দিনের ঘটনাটি ভিডিও করে প্রথম প্রচার করেছে ঘাটপাড়ার মিজানুর রহমান প্রকাশ বুড়া মিজান। মাস্টারপাড়ার মিজানুর রহমান প্রকাশ অভি মিজানও ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারাই প্রথম স্কুলের ফেইজে ভিডিও আপলোড দেয়। ভিডিও ফুটেজে যারা রয়েছে সবাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে-এমনটি ভাষ্য স্থানীয়দের।
ঘটনার ৩ দিন পর ১১ জানুয়ারী সরেজমিন ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মুমিনুর রশীদ। তিনি ভিকটিম আয়াত উল্লাহর জবানবন্দি নেন। শুনেন ঘটনার নির্মম বর্ণনা।
ঘটনার বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন খুবই আন্তরিক ছিলেন।
ন্যাক্কারজনক ঘটনাটিকে যাতে কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে; সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানীর শিকার না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসন সজাগ ছিল। সেকারণে ঘোলা পানিতে কেউ মাছ শিকার করতে পারেনি।
অভিভাবকের উপর নির্যাতনের মতো ধিকৃত ঘটনার মূল হোতা এনামুল হক ও মাস্টার নজিবুল্লাহকে তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী ভিকটিম ও স্বজনদের।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। প্রয়োজনে ভিডিও ফুটেজের সুত্র ধরে ঘটনায় কে কে জড়িত তা বের করা হবে।