বিদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু হতে পারে বলে দাবি করেছে মিয়ানমার টাইমস। বাংলাদেশ সরকার এরইমধ্যে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে ৮০২৩ জন রোহিঙ্গার তালিকা তুলে দিয়েছে মিয়ানমারের হাতে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় একজন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মিয়ানমার টাইমস বলছে, ওই যাচাই বাছাইয়ের কাজে দু’সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। এরই পরই শুরু হতে পারে প্রত্যাবর্তন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। মিয়ানমারের সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী ইউ উইন মিয়াত আই বুধবার বলেছেন, ‘যাচাই বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর পরই আমরা প্রত্যাবর্তন শুরু করবো।’ মন্ত্রী ইউ উইন মিয়াত আইয়ের ভাষায়, ‘যাচাই বাছাইকৃত তালিকা আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবো। বাংলাদেশের সবুজ সংকেত পেলেই প্রত্যাবর্তন শুরু করবো আমরা।’ স্থল ও নৌরুটে প্রতিদিন গড়ে ৩শ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। তবে মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ার কথা বলে প্রত্যাবাসন স্থগিতের ঘোষণা আসে একদিন আগে (২২ জানুয়ারি)। মিয়ানমারের অভিবাসন বিভাগ বলেছে, বাংলাদেশের দেয়া তালিকা রেজিস্টার ধরে প্রথমে যাচাই করবে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কর্তৃপক্ষ। একবার তা সম্পন্ন হয়ে গেলে, অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তারা তালিকার সঙ্গে দেয়া ডকুমেন্ট পরখ করে দেখবেন। একই বিষয়ে কথা বলেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট অফিসের মুখপাত্র ইউ জাওয়া হতাই। যাচাইবাছাই চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে বসবাসের বৈধতা প্রমাণ করেই শরণার্থীদের ফিরতে হবে।
এরআগে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর আগে ১১ হাজার মিয়ানমার নাগরিকের (রোহিঙ্গা) তালিকা দিয়েছিলাম। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করছে মিয়ানমার। এবার বিচ্ছিন্নভাবে নয়, ১ হাজার ৬৭৩ পরিবারের ৮ হাজার ৩২ জন মিয়ানমার নাগরিকের তালিকা তাদের কাছে দিয়েছি।’
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই তালিকা থেকে সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক পদক্ষেপ নেবে মিয়ানমার। একইদিনে মিয়ানমারের মন্ত্রী ড. উইন মিয়াত জানিয়েছিলেন, সরকার খতিয়ে দেখবে যে তারা আদৌ মিয়ানমারে বাস করতো কি না এবং কোনও সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল কি না। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে থাকা তালিকার সঙ্গে আমরা বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা মিলিয়ে দেখবো যে আসলেই তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা কি না। এরপর আমরা সেই লিস্ট তাদের পাঠাবো। এরপর দিনে ২০০-৩০০ জনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করবো আমরা।’ৱ