ইমাম খাইর
১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছিল। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলা ও লেখাপড়ার অধিকারের দাবীতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে।
মাতৃভাষার জন্য রাজপথে নেমেছিল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতের মতো পবিত্র আত্নাগুলো। রক্তের মিনিময়ে অর্জন করে নিল মায়ের ভাষা, আমার বাংলা ভাষা।
তাঁদের বলিদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে শহীদদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। আহতদের প্রতি সালাম ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রাণের ভাষা বাংলার জন্য যারা অবদান রেখেছেন, তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
দুঃখের বিষয়…
রক্তে কেনা বাংলা ভাষা সর্বত্র এখনো প্রচলন হয়নি। কি সরকারি, কি বেসরকারি। সব স্তরে একই হাল।বাস্তবায়নে কারো সদিচ্ছা নেই বললে চলে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানা হচ্ছেনা।
একুশে ফেব্রুয়ারির আয়োজনে যারা গাল ফুলিয়ে বক্তব্য দেন, তারাও আদেশ মানেনা। বরং ভিনদেশীদের ভাষা প্রচার-প্রতিষ্ঠা করে চলেছে।এই হলো বাংলা প্রীতি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে লিখে থাকে, স্ট্যাটাস দেয়। কিন্তু দু’চার লাইনেই ভুল আর ভুল। এমন অযাচিত ভুল করে, যা অর্থও পরিবর্তন করে দেয়। যে উদ্দেশ্যে লিখেছে তার উল্টো হয়ে যায়।
ভুল ছাড়া শুদ্ধ বের করা দায় হয়ে যায়। দুঃখজনক, আমরা বাঙালী!
সম্ভব হলে বিশ্বের সব ভাষা শিখুন, এটা আপনার যোগ্যতা। কিন্তু নিজের ভাষা বাদ দিয়ে নয়। আগে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিন। মাতৃভাষা ভালোভাবে রপ্ত করুন। এটাই আপনার-আমার মূল পরিচয়। ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জনস্বার্থে দায়ের করা একটি রিটের আদেশে গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, বিভিন্ন দপ্তরের নামফলকে পরবর্তী একমাসের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।
আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ আদেশ জারী করেন।
এছাড়া অনতিবিলম্বে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ (১৯৮৭ সালের ২ নং আইন) বাস্তবায়নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭ বাংলাদেশের সর্বত্র অনুসরণ করার জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।
সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। এ বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করতে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন করা হয়।
উল্লিখিত আইনের ৩ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এ আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস-আদালত, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জওয়াব এবং অন্যান্য আইনানুগত কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে।’ ওই ধারায় আরও বলা হয়েছে, ‘উল্লিখিত কোনও কর্মস্থলে যদি কোনও ব্যক্তি বাংলা ভাষা ব্যতীত অন্য কোনও ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন, তাহলে তা বেআইনি ও অকার্যকর বলে গণ্য হবে।’
ইমাম খাইর
যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক
কক্সবাজার নিউজ ডট কম (সিবিএন)
khaircox10@gmail.com
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।