নিজস্ব প্রতিবেদক:
পৃথিবীতে যুগে যুগে অসম্ভব কিছু সম্ভব করেই যুবকেরাই। কারণ স্বপ্ন, সাহস আর মানুষের জন্য কাজ করার তাড়না থাকে যুবকদের। তাইতো একে একে সৃষ্টি হয় সুন্দর কিছু। এর মাধ্যমে অনেক যুবক রেখে যায় তাদের অনুকরণীয় ইতিহাস। এমনই এক উদ্যোগ নিয়েছেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের দু’সাহসী যুবক। তারা হলেন জিয়াউল হক ও জাবের আহামদ। এই যুবক হোয়ানক ইউনিয়নের ফকিরখালী পাড়ার (পূর্বখোরশাপাড়া) বাসিন্দা। তারা নিজেদের শ্রম আর অর্থ দিয়ে দুর্গম পাহাড়ের লোকালয়ে তৈরি করেছেন দেড় কিলোমিটার রাস্তা। যেখানে এখন থেকে স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করবে তিন’শ পরিবারের প্রায় ২০ হাজার। এই রাস্তাই বদলে দিয়েছে পুরো এলাকার চিত্র। এই নিয়ে মানুষের প্রশংসায় সিক্ত হচ্ছেন স্বপ্নচারী যুবক জিয়াউল হক ও জাবের আহামদ।
জানা গেছে, বর্তমান আধুনিক যুগেও হোয়ানক ইউনিয়নের ফকিরখালী পাড়ার (পূর্বখোরশাপাড়া) ২০ হাজার চলাচলের কোনো রাস্তা ছিলো না। তিন/চার হাতের এক সরু পাহাড়ি ছরা দিয়ে চলাচল করতো তারা। দীর্ঘ ৭০/৮০ বছর এভাবে চলাচল করে আসছিল সেখানকার মানুষগুলো। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক জনপ্রতিনিধি এলাকা শাসন করেছেন! তারা বড় বড় কথা বলে মানুষকে ভুলিয়ে ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কিন্তু ভোটের পর কেউ আর হোয়ানক ইউনিয়নের ফকিরখালী পাড়ার (পূর্বখোরশাপাড়া) মানুষের জন্য তৈরি করে দেয়নি দেড় কিলোমিটারের একটি রাস্তা। এতে মানুষগুলোর ক্ষোভ ছিলো প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে বর্ষাকালে যখন পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে চলাফেরা বন্ধ থাকতো। বাইরে বের হতে না পেরে ঘরবন্দি থাকতে হতো; তখন মানুষগুলোর ক্ষোভ অনেক বাড়ে। মানুষের এই দুর্ভোগ দেখে আর চেয়ে থাকতে পারেনি ওই এলাকার দু’যুবক জিয়াউল হক ও জাবের আহামদ। চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ কোনো প্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি তাতে কি হয়েছে। তারাই করে দেবে দেড় কিলোমিটারের লম্বা রাস্তা!
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তারা নিজেদের টাকা ও শ্রম দিয়ে শুরু করলেন রাস্তা তৈরির কাজ। একমাস আগে এই যাত্রা শুরু করেন তারা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো এক বিপত্তি! তিন/চার হাত ছরার ভিতরতো রাস্তা হবে না। এটাতো পানি চলাচলের জন্য দরকার হবে। ৮০ বছরের দুর্ভোগ কমাতে হলে দরকার অন্তত আট হাতের রাস্তা। এর জন্য দু’পাশের বসতভিটা থেকে নিতে হবে বাকি অংশ। কিন্তু লোকজন ছাড়ছে না ভিটার অংশ। তবে তাতে দমে যায়নি তারা। এবার বোঝাতে লাগলেন লোকজনকে।
সাহসী যুবক জিয়াউল হক বলেন, অনেক কষ্টে বুঝিয়ে জায়গা ছাড় দিতে মানুষকে রাজি করালাম। অনেকে আবার নিজে নিজে খুশি জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। জায়গা পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করলাম। নিজেদের টাকায় প্রতিদিন ৫০জন করে শ্রমিক লাগালাম। সাথে আমরা নিয়মিত সময় দিচ্ছি। এভাবে কাজ করার মধ্যে এক মাসে দেড় কিলোমিটার রাস্তার অংশের অধিকাংশ নির্মাণ শেষ হয়েছে। বাকিটা আর ১০/১৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকার শ্রমিক খরচ গেছে। আরো ৫০ হাজার যাবে। সব টাকা তিনি আর জাবের দিয়ে যাচ্ছেন।
জাবের আহামদ বলেন, আমরা দু’জন কোনো টাকাওয়ালার ছেলে নয়। এমনকি নিজেরাও টাকাওয়ালা নয়। চলতি মৌসুমে অনেক পানের অনেক দাম রয়েছে। আমরা দু’জনের দুটি পান বরজ রয়েছে। ফলন ভালো ও দাম থাকায় পানে ভালো টাকা পেয়েছি। পান বিক্রির এই টাকা থেকেই আমরা টাকা দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করে রাস্তা তৈরি করছি।’
স্থানীয়রা লোকজন জানান, রাস্তাটি তৈরি হওয়ার ফলে এলাকাটির একটা অন্যরকম সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে। প্রসস্ত রাস্তা দিয়ে লোকজন অনায়সে ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাব উদ্দীন বলেন, ‘রাস্তা হওয়ার ফলে আমরা অনেক দিনের যন্ত্রণা আর দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেলাম। এতে আমাদের খুব আনন্দ লাগছে। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই আমরা জিয়াউল হক ও জাবের আহামদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং সবাই তাদের জন্য দোয়া করছি।’
স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বী নূর আহামদ বলেন, ‘জিয়াউল হক ও জাবের যে কাজ করেছে তা বিরল। তাদের এই উদ্যোগের ফলে আমরা মরণের আগে হলেও রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারছি। মরলেও আর আফসোস থাকবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিয়াউল হক এলাকার একজন প্রতিবাদী ও মানবিক যুবক। তিনি এলাকায় মদ, জুয়া, বেহায়াপনাসহ সব রকমের অসামাজিক কার্যক্রম প্রতিরোধ করেন। এলাকা লোকজনকে সাথে এভাবে এলাকা অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।