সোয়েব সাঈদ, রামু :
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষনের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর বক্তব্যে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি যুগোপযোগি, বাস্তবভিত্তিক, সময়োপযোগি ভাষন দিয়েছেন। এজন্য তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
বক্তব্যে সাংসদ কমল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নে উল্কার মত এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর যে দেশগুলো দ্রæত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ^ ব্যাংক বলছে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন দেখে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বলেছিলেন, কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হয় বাংলাদেশের শেখ হাসিনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে পৃথিবীর মানুষকে।
বাংলাদেশ এখন সেই সাহায্য নেয়ার দেশ নয়। আমরা এখন মানুষকে সাহায্য দিই। বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ নয়। বাংলাদেশ খাদ্য রপ্তানির দেশে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ তুলনামুলকভাবে পাকিস্তানের চেয়ে ধনী। সৌদি আরব, দুবাই, উত্তর কোরিয়াসহ অনেক উন্নত দেশের অর্থনীতি আজ হুমকীর মুখে। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহি সম্পদে ভরপুর গ্রীস আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেউলিয়া হয়েছে। সাইপ্রাসের সেই ঐতিহ্য নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে উল্কার গতিতে।
এই দেশে একদিন খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় ছিলেন। সেসময়ে এদেশে মাতৃমৃত্যুও হার ছিলো শতকরা ৩৭ ভাগ। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৩ হাজার ৫৫৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক করে ৩২ প্রকার ঔষধ দেয়াতে মাতৃমৃত্যুর হার শতকরা ১ ভাগে নেমে পৃথিবীতে রেকর্ড হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিশুদের ঝরে পড়া সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। যা খালেদা জিয়ার আমলে ছিলো শতকরা ২৮ ভাগ। ৮ বছর ধরে শিশুদের বছরের প্রথমদিনে নতুন বই দেয়ার কারনে ঝরে পড়ার হার এখন ৬ ভাগে নেমেছে। খালেদ জিয়ার আমরে সারের জন্য কৃষকরা রক্ত দিয়েছে। শেখ হাসিনার সময়ে কৃষকের ঘরে ঘরে সার পৌঁছে যাচ্ছে। সার পাওয়ায় দেশে আজ বাম্পার ফলন হচ্ছে। কমে গেছে খাদ্য ঘাটতি।
খালেদ জিয়ার সময়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পাননি। জানুয়ারি মাসের বেতন পেয়েছে মার্চ মাসে। বেতন-বোনাস থেকে উপেক্ষিত হতে হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুন করা হয়েছে। যা পৃথিবীর কোন দেশ পারেনি। এ হচ্ছে শেখ হাসিনার আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ।
খালেদা জিয়ার আমলে আদমজী জুটমিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। পাটকলগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো। শেখ হাসিনার আমলে একটি পাটকলও বন্ধ হয়নি। খালেদ জিয়ার আমলে এক মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উদপাদন হয়নি। আর শেখ হাসিনার আমলে নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।
কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রসংগে এমপি কমল সংসদে বলেন, দেশ যেমন উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের কক্সবাজারও উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারবাসীকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিকীকরণ করছেন, ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেল লাইন সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিকেএসপি দিয়েছেন, ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যান্টনমেন্ট দিয়েছেন, সমুদ্র গবেষনা ইন্সটিটিউট দিয়েছেন, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম দিয়েছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুটবল স্টেডিয়াম দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, মেডিকেল কলেজ দিয়েছেন। শেখ হাসিনার সময়ে কক্সবাজারে যত উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নয়, গত ১ হাজার বছরের ইতিহাসে কক্সবাজারের তত উন্নয়ন হয়নি।
তিনি বলেন, কক্সবাজার-সদর রামুতে এমন কোন গ্রাম নেই, যে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিইনি। এমন কোন ইউনিয়ন নেই, যে ইউনিয়নের রাস্তাগুলো পাকাকরণ হয়নি। দুই উপজেলায় দুইটি কলেজ ভবন নয়, কলেজ, হাই স্কুলও সরকারিকরণ হয়েছেন। নির্মিত হয়েছে নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার-রামুতে স্বাধীতার আগে উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো ১১ টি। স্বাধীনতার পরে হয়েছে ২৮টি। আর বিগত ৪ বছরে নতুন হাই স্কুল করেছেন ১৯টি।
লবণ চাষিরা ন্যায্য মূল্য পেয়েছে। বিএনপির আমলে তারেক জিয়া ও বিএনপি নেতাদের পৃষ্টপোষকতায় ট্রলারযোগে সার পাচার হতো মায়ানমারে। আর মায়ানমার থেকে আনা হতো লবন। একারনে লবন চাষিরা ন্যায্য মূল্য পেতনা। এখন সঠিক মুল্য পেয়ে কৃষকেরা উৎফুল্ল। দেশ যখন সেজেছে, কক্সবাজারও তেমন উন্নয়নে সেজেছে। বঙ্গবন্ধু দেশ দিয়েছেন, শেখ হাসিনা দিয়েছেন উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধু সাহসের সাথে মোকাবেলা করে বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন।
সাংসদ কমল বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান পৃথিবীর কেউ করতে পারেনি। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেখে অবাক। জার্মানী সাহস দেখা পারেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই সাহস দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি, ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের আমরা খাওয়াতে পারবো। প্রয়োজনের আমাদের আহার ভাগ করে খাবো। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের সেই বক্তব্যকে পৃথিবীর সব মানুষ অভিবাদন জানাচ্ছে।
সাংসদ কমল জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৫ আগস্ট এর সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, সেসব বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।