সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার :
কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের বৃহত্তর গোমাতলীর পাউবো বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলেও গাইট্যাখালী-রাজঘাট পাড়া সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫ গ্রামের জনগণ। স্থানীয়দের দাবী ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এ দূরঅবস্থা চলছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা ব্যায় নির্ধারন করে গাইট্যাখালী-রাজঘাট পর্যন্ত (মনিরুজ্জামানের বাড়ি হতে রাজঘাট পাড়া জেটি) প্রায় ১৮শ মিটার ৫৪ চেইন সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কাজের সিডিউল মতে গত বছরের মার্চ মাসে কাজ শুরু করেন স্থানীয় লিপু এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। বিধিবাম ঘুর্ণিঝড় রোয়ানু-মোরার আঘাতে নির্মাণাধীন সড়ক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সে থেকে চলতি বছরের ফ্রেবুয়ারী পর্যন্ত দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টানসহ সংশ্লিষ্টদের। যার কারনে এলাকার দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, বিগত রোয়ানুর আঘাতে গাইট্যাখালী-রাজঘাট পাড়া সড়ক পানিতে ভেঙ্গে যায়। ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রাজঘাট, চরপাড়া, আজিমপাড়া, গাইট্যাখালী, আছিন্ন্য পাড়ার মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।
চরপাড়ার আবদুল মুনাফ জানান, সড়কটি অনেক গুরত্বপূর্ন একটি সড়ক, এই সড়কে গত বছর কিছু কিছু জায়গায় বালি ভরাট করে অধিকাংশ জায়গায় কাজ না করার কারনে আমরা পায়ে হেটেই যাতায়াত করতে পারিনা। যার জন্য আমরা এলাকার লোকজন নিজস্ব উদ্যোগে হাটি, সাকু বানিয়ে যাতায়াত করছি। তিনি আরও বলেন আমার স্ত্রী কদিন আগে এইখান দিয়ে যাতায়াত করতে গেলে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পান এবং চিকিৎসার জন্য আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
একই এলাকার শাহিনা বেগম জানান, আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে এবং এমন অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা হতে পারে।
রাজঘাট এলাকার কলিম উল্লাহ বলেন, আমরা প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে জেলা, উপজেলা ও ঈদগাঁও বাজারে যাই, ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যায়। এমন অবস্থায় বড় কষ্টের মধ্যে তাদের যাতায়াত করতে হয়। এই সড়ক দিয়ে কোন সাইকেল, রিক্সা, ভ্যান, অটো দিয়ে যাতায়াত করবো তার উপায় নেই। আর মালামাল নিতে গেলে তো অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, গোমাতলী সড়কের পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত নির্মান কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখনো গাইট্যাখালী-রাজঘাট পাড়া সড়ক ভরাট করা হয়নি এজন্য লোকজন ভোগান্তি পোহাচ্ছে । তিনি আরও বলেন এই প্রকল্পটির ঠিকাদারের গাফলতী রয়েছে এবং আমি ঠিকাদারকে বলেছি দ্রæত সড়কের ভরাটের কাজ যেন শুরু করা হয়।
প্রকল্পের ঠিকাদার হাবিব উল্লাহ জানান, প্রাথমিক ভাবে গত বছর সড়কে বক্স করে বালি ভরাট ও প্যালাসাইডিংয়ের কাজ করা হয়। ঐসময় প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও জোয়ারের পানিতে সব ভেসে গেছে। যার কারনে কাজ বন্ধ রাখা হয়। অন্যদিকে কাজের শুরু থেকে কোন ধরনের বিল এবং এখনো কাজ শুরু করার নির্দেশনা না পাওয়ায় আপাতত কাজ করা যাচ্ছেনা। তবে গতকাল রবিবার সরজমিন সড়ক পরিদর্শন করা হয়েছে দাবী করে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অর্ডার পেলে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বস্থ করেছেন।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদার সম্পূর্ন কাজ করে বুঝিয়ে দেয়নি। বক্স করে বালি ভরাটের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ঠিকাদারের বিলও পরিশোধ করা হয়নি। মোরা ঘুর্ণিঝড় চলাকালীন অবস্থায় বালি ভরাটের কাজ শেষ করতে পারেনি, এখন তাকে জরুরীভাবে কাজটি শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়েছে। অচিরেই কাজটি শুরু করে জনদুর্ভোগ লাঘব করা হবে। তিনি বলেন এ প্রকল্পটি ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের। এ প্রকল্পটি ব্যয় সম্ভবত ২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার মত। প্রজেক্টটা বুঝিয়ে দেয়া হলে এবং ফাইনালী অনুমোদন হলে ঠিকাদার বিল পাবে।
সদর উপজেলা প্রকৌশলী হেলাল উদ্দীন জানান, ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে এ প্রকল্পটির কাজ শুরু করে আগামী মে মাসেই সম্পূর্ন শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু বন্যা ও পাশ্ববর্তী পউবো বেড়িবাঁধ ভাঙার কারনে তিনি প্রকল্পটি শেষ করতে পারেননি ।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নোমান হোসেন প্রিন্স জানান, জোয়ারভাটার কারনে সড়কে বক্স করে বালি ভরাট করতে পারেনি। সড়কের কাজ যাতে দ্রæত করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।