সোয়েব সাঈদ, রামু:
রামুতে পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে রুমা শর্মা নামের চিহ্নিত মানব পাচারকারী। রুমা শর্মার নেতৃত্বে একটি চক্র কক্সবাজারের বেকার যুবকদের লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় চাকরি দেয়ার নামে বিপুল টাকা আত্মসাত করেছে। এরমধ্যে একটি মামলায় রুমা শর্মার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ তাকে আটক করতে এ অভিযান চালায়।

আটক হওয়া রুমা শর্মা রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের পূর্ব নোনাছড়ি রমনীপাহাড় এলাকার মনোহরী শর্মা দুলালের স্ত্রী। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় রামু থানার উপ-পরিদর্শক ছানা উল্লাহর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এ মামলায় রুমা শর্মার স্বামী মনোহরী শর্মা দুলাল ও ছেলে রাহুল শর্মা পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের আটক করতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে জেলার বহুল আলোচিত মানবপাচারকারি চক্রের অন্যতম হোতা রুমা শর্মাকে আটকের খবরে এলাকায় জনমনে স্বস্থি ফিরে এসেছে। উল্লসিত জনতা রুমা শর্মা সহ পাচারকারি চক্রের সকল সদস্যদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি বেকার তরুণ-যুবকদের চাকরি দেয়ার নামে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফিরিয়ে নেয়ারও জোর দাবি জানিয়েছেন।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছানা উল্লাহ রুমা শর্মাকে গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রুমা শর্মার বিরুদ্ধে লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি দেয়ার নামে বেকার যুবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে বিজ্ঞ আদালতে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। রুমা শর্মা বর্তমানে রামু থানা হেফাজতে রয়েছে। তাকে কোর্টে চালান দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মামলার বাদি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সুরাজপুর গ্রামের নির্মল কান্তি শর্মার ছেলে শংকর কান্তি শর্মা জানিয়েছেন, রুমা শর্মার ছেলে রাহুল শর্মা লন্ডন প্রবাসী। ছেলেকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে রুমা শর্মা ও তার স্বামী মনোহরী শর্মা প্রকাশ দুলাল বাদী শংকর বড়–য়া সহ অনেক বেকার তরুন-যুবককে লন্ডন সহ বিভিন্ন দেশে চাকরি দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শংকর কান্তি শর্মা আরো জানান, রুমা শর্মা ও তার সহযোগিরা তাকে লন্ডনে চাকরি দেয়ার নামে ২০১৫ সালে ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে লন্ডন না পাঠিয়ে নিজেরা চট্টগ্রামে আত্মগোপন করে। পরে এ নিয়ে তিনি রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ লিখিত অভিযোগ দেন এবং রামু থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন।

ইউনিয়ন পরিষদে রুমা শর্মা দোষী সাব্যস্ত হলেও টাকা প্রদানে গড়িমসি করেন। এতে নিরুপায় হয়ে তিনি ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। সম্প্রতি পিবিআই কক্সবাজার এর উপ-পরিদর্শক মো. শরীফ উল্লাহ ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরই প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ বিচারিক হাকিম অভিযুক্ত রুমা শর্মা ও তার স্বামী এবং ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানিয়েছেন, শংকর কান্তি শর্মার অভিযোগ পেয়ে উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছিলো। তদন্তে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রমানিত হলেও রুমা শর্মা ও তার লোকজন টাকা ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি করেছিলো।

জানা গেছে, রুমা শর্মা ও তার সহযোগিদের হাতে বিদেশ যাওয়ার নামে প্রতারিত হওয়া অনেক এভাবে আইনের আশ্রয় নিয়ে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।