আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ :
টেকনাফে তরমুজ ও ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটেছে। মাত্র তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক পরিচর্যার ফলে ফল বিক্রি করে লাখপতি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগীতায় ১.২০ একর জমি লাগিয়ত নিয়ে নতুন দুই কৃষক এই সাফল্যের মুখ দেখেছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, টেকনাফের নাইট্যং পাড়ার হাবিবুর রহমানের পুত্র নুর বশর (৫০) স্থানীয় বরফ মিলে চাকুরী করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় নুর আহমদের পুত্র কৃষক সামশুল আলমের (৩৮) সাথে শেয়ার করে ১.২০ একর জমি ১০ হাজার টাকায় লাগিয়ত নেয়। উক্ত জমিতে টেকনাফ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে হাইব্রিড (কহিনুর) ভুট্টা ও (বিগশো) তরমুজের চাষ করার উদ্যোগ গ্রহন করে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, কারিগরী ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে যথাসময়ে বীজ বপন করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এখন সফলতার মুখ দেখছে।
সরজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, ইতিমধ্যে ভাল ফলন এসেছে ভুট্টা ও তরমুজ গাছে। প্রতিটি ভুট্টা গাছে একাধিক মোচা দেখা যায়। ভুট্টা চারার ঘন সবুজ রংয়ে ফসলের মাঠ অপরুপ রুপ ধারন করেছে। পাশাপাশি তরমুজ ক্ষেতেও প্রচুর ফল ধরেছে। একটি গাছে ৩ থেকে চারটি তরমুজ ফল দেখা গেছে।
চাষীদ্বয় সঠিক পরিচর্যা ও নিয়মিত দেখাশুনা করায় বর্তমানে গাছে ভূট্টা ও তরমুজের বাম্পার ফলন দেখা গেছে। কৃষক নুর বশর জানান, ১০ হাজার টাকায় ১.২০ একর জমি লাগিয়ত নিয়ে ভুট্টা ও তরমুজের চাষ করেছি। এতে এপর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনের পরামর্শে সঠিক পরিচর্যা এবং তাদের নিয়মিত তদারকির ফলে এখন ভাল ফলন হয়েছে। ৩ হাজার টি তরমুজের গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১৪০ টাকা ধরে ক্ষেতে থাকতেই ১ হাজার ৫০০ টি অগ্রীম বিক্রি হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা অগ্রীম হিসেবে ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে গেছে। আরো ২ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। আরো আড়াই হাজার মতো তরমুজ অবিক্রিত রয়ে গেছে। এগুলোর আরো বেশী দামে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, ১০ হাজার মতো ভুট্টা গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ফল এসেছে। কৃষক নুর বশর আরো জানায়, যদি কোন প্রকৃতিক বিপর্যয় না আসে তাহলে তরমুজ ও ভুট্টায় কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার বেশী বিক্রয় আসতে পারে। অল্প টাকা ভাল বাম্পার ফলন ও ভাল লাভ হওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশি। নুর বশরের শেয়ারদার কৃষক শামশুল আলম জানায়, পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিন রাত পরিশ্রমের ফসল ক্ষেতের এই বাম্পার ফলন। ভুট্টা ও তরমুজ চাষের পাশাপাশি অল্প পরিমান শিম, মরিচ, আলু ও বাদামের চাষও করা হয়েছে। তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগীতার জন্য কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদেরকে সাধুবাদ জানান। আগামীতেও এধরনের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল দানাজাতীয় শস্য। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ বেশি। এতে প্রায় শতকরা ১১% আমিষজাতীয় উপাদান আছে। আমিষে প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে রয়েছে। এছাড়া হলদে রঙের ভুট্টাদানার প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-এ রয়েছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। অপরদিকে গ্রীষ্মকালে প্রচÐ গরমে তরমুজের চাহিদা প্রচুর রয়েছে। এসময় অনেকেই ঠাÐা তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। তবে অতিরিক্ত ঠাÐা তরমুজ পাকস্থলির ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া তরমুজে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ এবং ঈরঃৎঁষষরহবসহ স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন উপাদান। এগুলো শরীরে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। তরমুজ ত্বকের উপকার করে, হাড় ও হার্টকে সুস্থ রাখে, কিডনি বা বৃক্কের কর্মক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখে, পেশীর ব্যথা থেকে বাঁচতে তরমুজ উপকারী, অ্যাজমা প্রতিরোধে ও বিশেষ করে প্রোস্টেটের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। ফলে কৃষকরা চাষ করে যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি মানুষের রোগ বালাই থেকে দুরে রাখতে এসব ফলাদী সহায়ক ভুমিকা পালন করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, যদি সূস্থ থাকতে চান, তাহলে বেশী করে ফল খান। তাই ফলাদীর চাষে কৃষকদের উদ্ভোদ্ধ করা হচ্ছে। বেলে ও দোঁআশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশে ভুট্টার চাষ দ্রæত বাড়ছে। টেকনাফের মাটি ভুট্টা ও তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। ভাল পরিচর্যা, নিয়মিত দেখাশুনা ও সঠিক সার প্রয়োগের মাধ্যমে ভাল ফলন সম্ভব। কৃষকদেরকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সব ধরনের সহযোগীতা, পরামর্শ ও উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে নিয়মিত দেখভালের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। এরই বাস্তব উদাহরণ নাইট্যংপাড়া ওই দুই কৃষক।