ডেস্ক নিউজ:
আওয়ামী লীগখালেদা জিয়ার সাজাকে কেন্দ্র করে বিএনপির পক্ষ থেকে বড় ধরনের আন্দোলন-কর্মসূচির আশঙ্কা ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। আরও শঙ্কা ছিল আন্তর্জাতিক মহলের নানা ধরনের প্রতিক্রিয়ার। এজন্য কিছুটা আগাম প্রস্তুতিও ছিলও ক্ষমতাসীনদের। তবে সেই অর্থে কোনও ধরনের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে না হওয়ায় অনেকটাই নির্ভার তারা। ফলে নির্বাচনি বছরকে ঘিরে যেসব পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর কথা ছিল, সেই পথেই হাটতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারণী সূত্র বলছে, তাদের ধারণা ছিল- খালেদা জিয়ার সাজাকে কেন্দ্র বিএনপি অতীতের মতো ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগসহ সহিংস কর্মসূচির পথে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল আওয়াম লীগ। এছাড়া, একাধিকবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যতম শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের সাজাকে কেন্দ্র করে কিছু আন্তর্জাতিক দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও ছিল সরকারের মধ্যে। তবে খালেদা জিয়ার সাজার রায় ঘোষণার পর জাতিসংঘের মহাসচিবের একটি বিবৃতি ছাড়া এপর্যন্ত আওয়ামী লীগ বা সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক কোনও চাপ আসেনি বলে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান।
তাদের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর ইস্যুতে সরকারকে যে বেগ পেতে হয়েছে, খালেদা জিয়ার সাজার ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও আসেনি। দুটি আশঙ্কার জায়গা থেকে কোনও ধরনের বেগ পেতে হয়নি সরকারি দলকে। খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষণার পর একসপ্তাহ পার হতে চললেও বিএনপি বড় ধরনের কোনও আন্দোলন বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারায়, আওয়ামী লীগ কেবল নিজেদের নির্ভারই মনে করছে না, বরং তাদের মধ্যে চাঙ্গাভাব সৃষ্টি হয়েছে। দলের তৃণমূল পর্যন্ত এর প্রভাব পড়েছে। দলটি মনে করছে, এই চাঙ্গাভাব ধরে রেখে দলকে আরও শক্তিশালী করে তাদের নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে। দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি নির্বাচনি প্রচারণায় বড় অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে বলেও মনে করেন তারা। এজন্য বিপুল উৎসাহে তৃণমূলে সফরসহ একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে বলে আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিবাদ না আসার কারণ বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, বার বার সহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির দায়ে দলীয় প্রধানের সাজা হওয়ায় তারা নৈতিক মনোবলও হারিয়ে ফেলেছে। অতীতের সহিংস আন্দোলনে জনসমর্থন না পাওয়ায় বিএনপির মধ্যে কিছুটা উপলব্ধিও এসেছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যার কারণে বিএনপি সহিংস আন্দোলনের পথ ছেড়ে অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরও সমর্থন পাচ্ছে না বিএনপি বলে মনে করে ক্ষমতাসীনরা।
প্রস্ঙ্গত, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনি সফর শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি টিমে বিভক্ত হয়ে তারা সফর কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, দলের সভাপতিও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি সিলেট ও বরিশালে সফর করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী ও ৩ মার্চ খুলনা সফরে যাবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের জন্য এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে চিঠি পাঠানো এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে আমাদের নির্বাচনি প্রচারণা ও প্রস্তুতিতে কোনও ছন্দপতন হয়নি। বরং আমাদের প্রস্তুতি আরও জোরদার হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা নতুন বছরে যে ট্যুর প্রোগ্রাম শুরু করেছি, তা অব্যহত রয়েছে। আমি নিজেও এখন ঢাকার বাইরে রয়েছি। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) খুলনায় যাবো। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৩ মার্চ খুলনা সফরে আসবেন, তার প্রস্তুতিমূলক সভা করবো। ১৭ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরে কর্মীসভা করবো। এরপর রাজশাহীতে যাবো। আমাদের অন্যান্য টিমও সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। প্রচণ্ড রকম উচ্ছাস উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আমাদের সফর কর্মসূচিগুলো সফল হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সরকার দলের এমপি রহমান বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি, দক্ষতা ও জনসমর্থন নেই। দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায় তাদের নৈতিক অবস্থানও নেই। এ কারণে তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না ‘
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল, তবে ভয়ে ছিলাম না। খালেদা জিয়া একটি বড় রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী। দুবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার সাজায় কিছু প্রতিক্রিয়া হবে, এ ধরনের আশঙ্কা আমাদের কিছুটা ছিল। বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনিক প্রস্তুতি রেখেছিলাম। আমরা এখনও যে গুরুত্ব দিচ্ছি না, তা নয়। আমাদের পলিসি হলো- এটা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুভাবে মোকাবিলা করা, সেটা করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার রায়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারনায় কোথাও বাধা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে টিম করে জেলা পর্যায়ে কর্মী সভা করছি। সেটা অব্যাহত রয়েছে। আরও জোরদার হচ্ছে।’
বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে স্বাগত জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি উপলব্ধি করেছে যে, ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগ করে জনসমর্থন পাওয়া যায় না। বরং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হয়। বিএনপির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। না হলে সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর সাজায় দেশের কোথাও কোনও প্রতিবাদ এলো না কেন? তাদের জনমর্থন থাকলে গ্রামগঞ্জে হাজার হাজার মানুষ নেমে পড়তো। পুলিশ-প্রশাসন জনরোষে পড়তে পারতো। কিন্তু তার কিছুই তো আমরা দেখিনি।’ বিএনপি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে ফিরে এসেছে বলে মনে করেন সাবেক খাদ্য মন্ত্রী ড. রাজ্জাক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শাস্তি হলেও বিএনপি সহিংস আন্দোলনে যেতে পারেনি, হাতি-ঘোড়া পেছনে পায়নি বলে। দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা সাহস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। দলটি নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে সহিংস আন্দোলনে যাওয়ার সাহস পায়নি।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।