স্যালিউট পুলিশ ভাই

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০১:১২ , আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০১:৩৩

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


শাহেদ মিজান

পৃথিবীর অন্যদেশে কেমন জানিনা, আমাদের দেশে পুলিশ চরিত্রের বেশ বদনাম আছে। এটা অস্বীকার করারও উপায় নেই। কারণ সাধারণ মানুষের প্রতি পুলিশ যে আচরণ করেন তাতে মনে হয় পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ উভয়ই যেন ভিন্ন কিসিমের জাত। পুলিশের এই হম্বিতম্বি হাবভাবের কারণে পুলিশকে এখনো ‘বন্ধু’ ভাবতে সাহস করা যায় না। (এখানে বলে রাখছি, পুলিশের উচ্চ র‌্যাঙ্কের কর্মকর্তারা আচরণে অত্যন্ত ভদ্র)। কিন্তু একটা চিরসত্য কথা হচ্ছে, পৃথিবীর সব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। তেমনি পুলিশ বাহিনীতেও ব্যতিক্রমী অনেক পুলিশ সদস্য রয়েছেন। যারা সময়ের আবর্তে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রেখে দেখিয়ে দিয়ে যান, তিনি শুধু পুলিশ নয়; একজন মানুষও। এমন ‘পুলিশ মানুষ’গুলো মাঝে মাঝে আমাদের চোখে ধরা দেয় ভিন্ন এক মানবতার দৃষ্টান্ত নিয়ে।

আপনাদের নিশ্চয়ই শের আলীর কথা মনে পড়েছে! সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত এক শিশুকে বাঁচাতে তাঁর কী রকম আকুতি। এই তিনি দেশবিদেশে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন। আমরা মনে করতে পারি কুমিল্লায় নিজের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ডোবায় ডুবন্ত বাসের ভিতর থেকে বের করে এনে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ২২টি মানুষের প্রাণ। পুলিশে এমন আরো অনেক জ্বলন্ত মানবিক দৃষ্টান্ত আছে। এবার এই মানবতার সড়কের সারথী হলেন আরেক পুলিশ ভাই। তিনি কক্সবাজারের মহেশখালী থানার পুলিশ দায়িত্বরত কনস্টেবল আফতাব উদ্দিন।

ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের (১৪ ফেব্রুয়ারি)। তিনি হয়তো কারো জীবন বাঁচাতে নিজের জীবনকে বাজি ধরেননি বটে। ঘটনাটি এরকম- ‘আদিনাথ মন্দির এলাকা। অসহ্য রকমের ভিড়, সময় মতো পূজা দিতে হবে তাই সবাই যে যার মতো নিজের বিষয়ে ব্যস্ত। মা-তুল্য বুড়ো নারীটি কাতর স্বরে সবার কাছে আকুতি রেখে চলছে- তারে যেনো মূল মন্দিরে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হয়। বহু সময় ধরে এই অবস্থা চলার পর দৃশ্যটি সবাই অগ্রাহ্য করলেও এমন মানবিক ছবিটি চোখ এড়ায়নি একজন পুলিশ কনস্টবলের।’

তিনি পুলিশ কনস্টেবল আফতাব উদ্দিন। পরের ঘটনা এরকম- পাঁজাকোলা করে বুকে তুলে নিলেন প্রায়ই হাঁটতে অক্ষম এই মা-মানুষটিকে। মন্দিরের একেবারে জিরো পয়েন্টে নিয়ে গিয়ে পূজা ও প্রাণখুলে প্রার্থনা করবার সুযোগ করে দিয়ে শেষতক কোলে করে আবার রেখে আসলেন নিরাপদ অবস্থানে। ডিউটির ব্যস্ততম সময়ে এই ছোটো একটি কাজ করতে পেরে বেশ প্রফুল্ল এই মুসলিম পুলিশ। এমন বিরল মানবিক দৃশ্যের ছবিটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

মহেশখালীর শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক মাহবুব রোকনের ওয়ালে এই ছবি দেখে আমি এক মুহূর্তের জন্য থমকে যাই। আহা, কত সুন্দর ও সুখকর একটি দৃশ্য! এই ছবিটি আমাকে একপশলা শ্রদ্ধায় অবনত করে দিয়ে যায়। তাই কমেন্ট বক্সে লিখে দিলাম- স্যালিউট পুলিশ ভাই। আবারও বলছি স্যালিউট পুলিশ ভাই আফতাব উদ্দিন। আপনারা আছেন বলেই এখনো পুলিশ বাহিনীর সুনাম টিকে আছে। শেষান্তে বলতে চাই, সব পুলিশ ভাই এমন দৃষ্টান্ত রাখতে কাজ করুন। আপনারা জনগণের বন্ধু হোন। দেখবেন দেশটাই বদলে গেছে!

শাহেদ মিজান, চীফ রিপোর্টার, সিবিএন: