সাইফুল ইসলাম:
কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে দিন-রাত পাহাড় কাটা চলছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরধারির অভাবে কোনো মতেই বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। কয়েক সপ্তাহ ধরে গভীর রাত থেকে শুরু করে দিন-দুপুরেও জনসম্মুখে শহরের বিভিন্ন স্পটে পৃথক পৃথক স্থানে শতাধিক শ্রমিক দিয়ে মিনি ট্রাক (ডাম্পার), ঠেলা গাড়িসহ নানা পরিবহনের মাধ্যমে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে ভুমিদস্যুরা ও পাহাড় খেকোরা। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। তবে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে আটকসহ জরিমানা করা হলেও তারপরেও থেমেনি এ পাহাড় কাটা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার রহমানিয়া মাদ্রাসার সামেন আদর্শ কেজি স্কুলের গলির শেষ পয়েন্টে, আলিরজাঁহাল সাহিত্যিকা পল্লী এলাকায়, বিডিআর ক্যাম্প পশ্চিম চৌধুরী পাড়া, কলাতলী, লাইট হাউজ, বাসটার্মিনাল, লারপাড়া, ফাওয়ার হাউজের দক্ষিণ পাশে,সাহিত্যিকা পল্লী এলাকা, আর্দশগ্রাম, কলাতলী টিএনটি পাহাড়, চন্দিমা এলাকা, বড়ছরা, বাদশাঘোনা, পাহাড়তলী, কলাতলীর জেল গেইট এলাকাসহ পর্যটন এলাকার বিভিন্ন স্থানে দেদারছে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।
সম্প্রতি শহরের পাহাড়তলী এলাকার রহমানিয়া মাদ্রাসার সামনে ও পাহাড়তলী আদর্শ কেজি স্কুলের সামনের গলিতে গিয়াস উদ্দীন ভুলুর নেতৃত্বে একই এলাকার মমতাজ আহমদের ছেলে আলী আকবর মিস্ত্রি প্রায় ২’শ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে সাবাড় করে ভবণ ও বসতবাড়ি নিমার্ণের প্রস্ততি নিচ্ছে। এদিকে কলাতলীর টিএনটি পাহাড় কয়েকদিন ধরে রাতের বেলায় দেদারছে কাটছে একই এলাকার ভূমিদস্যু ইলিয়াস সওদাগরের নেতৃত্বে ও লাইট হাউজ পাড়া এলাকা আলী জুহুরের নেতৃত্বে পাহাড় কেটে ভবণ নিমার্ণ ও বাসটার্মিনাল লারপাড়া এলাকায় একই ওয়ার্ডের চৌকিদারের নেতৃত্বে চলছে প্রায় আইড়াশফুট উঁচু পাহাড় কাটা চলছে। তবে অভিযোগ ওঠেছে কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে পর্যটন এলাকার দেদারে পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্পটে চলছে পাহাড় কাটা।
জানা যায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সম্প্রতি জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভুমিদস্যু ও পাহাড় খেকোদের বিচরণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। রাতারাতি পাহাড়ি জমি দখল করে শত শত শ্রমিক দিয়ে সমতল বানিয়ে প্লট তৈরি করে তা অধিকমূলে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানিকে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে এ পাহাড় খেকো ও ভুমিদস্যুদের কবলে পড়ে সরকারী উচু পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে। যে পাহাড়গুলো কয়েক দিন পূর্বেও চারদিকে সবুজ আবরণ ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল বর্তমানে পাহাড় কাটার কারণে সেই সৌর্ন্দয বিলীন হয়ে গেছে।
পাহাড়তলী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, শুধু পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার জন্য শহরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। তারা বিভিন্ন লোকজনকে প্রলোভনে ফেলে এ সব পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার কৌশল সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন এ সব পাহাড়ি জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালালে বেকায়দায় পড়েন ক্রেতারা। পাহাড় কাটার চাইতে পাহাড় বিক্রি বন্ধ করা অতীব জরুরী। পাহাড় বিক্রি বন্ধ হলে কমে আসবে পাহাড় কাটা। এ সব কাজে প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়াটাই এখন জরুরী।
মোহাম্মদ ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, মানুষ কম দামে পাহাড় ক্রয় করে থাকে। বর্তমানে অনেক পাহাড় উজাড় হয়ে গেছে। বিগত সময়ের পাহাড় এখন সমতল ভুমি। ওই ভুমিতে যে পাহাড় ছিল তা বোঝার কোন উপায় নেই। ওই সব এলাকাতে জমি ক্রয় করলে একটি সিন্ডিকেটকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। নয়তো জমি ক্রয় করলেও তা দখলে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, কক্সবাজারে একটি স্থায়ীবসতী গড়ে তুলতে উদগ্রীব হয়ে থাকে বিভিন্ন পেশার লোকজন। এটিকে পুঁজি করেই পাহাড় বিক্রিতে নেমে পড়ে কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র। অনেকেই পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তুলছে ভবন ও বসতবাড়ি।
এবিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রশাসন শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এমনকি এ পাহাড় কাটায় জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। পাশাপশি শহরের বিভিন্ন স্পটে পাহাড় কাটার খবর রয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।