হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

গত ২দিন ধরে টেকনাফের ত্রাস দূর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম ও তার সহযোগীদের বসতবাড়ীতে এবং আস্তানায় ভাংচুর চলছে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর। ১২ এবং ১৩ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টা থেকে বিকাল পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার পল্লানপাড়া এলাকার শত শত বিক্ষুদ্ধ জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে বৈদ্য ঘোনা এলাকায় ৪টি, মোনাফ ঘোনায় ১টি, মায়মুনা প্রাইমারি স্কুল ও হারেছ কাউন্সিলরের বাড়ী সংলগ্ন ২টি বসতবাড়ী ভাংচুর করে।

১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাতের বন্দিশালা থেকে অপহৃত এক যুবককে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ-জনতা। টেকনাফের গহীন পাহাড়ে পুলিশ-জনতা যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় ডাকাত দলের সাথে পুলিশের অর্ধ শতাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ডাকাত দলের আস্তানা থেকে দু’টি এলজি, ৫ রাউন্ড কার্টুজ এবং ৬টি কিরিচ উদ্ধার করে। ১১ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকাল ১০টা থেকে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাঈন উদ্দিন খাঁন ও পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৩৯ জন সদস্য ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে ৩টি দল টেকনাফের নেটং পাহাড়ের গভীরে অভিযানের এক পর্যায়ে বিকাল ৩টার দিকে অপহৃত যুবক জালাল আহমদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এসময় স্থানীয় শত শত জনতা পুলিশকে সহায়তা করে। অপহৃত যুবক জালাল আহমদ (২২) টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া এলাকার আলহাজ্ব জহির আহমদের ছেলে। ৯ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাত ১০টার দিকে রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে স্বশস্ত্র ডাকাতদল নিজ বাড়ী থেকে তাকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিল। এঘটনার পর থেকে স্থানীয় লোকজন হাকিম ডাকাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ডাকাত সর্দার আবদুল হাকিম উপজেলা কমপ্লেক্স সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকায় আস্তানা গেড়ে গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর আবু হারেছ বলেন, ‘হাকিম ডাকাত ও সহযোগীদের আস্তানাসহ ৭টি বাড়ীতে ভাংচুর করেছে বিক্ষুদ্ধ লোকজন। ভাংচুরকৃত বাড়ীর লোকজন আগেই সরে পড়ে’। সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাঈন উদ্দিন খান বলেন ‘বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ডাকাত দলের বেশ কয়েকটি আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি’।

স্থানীয় লোকজন জানান, হাকিম ডাকাত যে কোন সময় রাতের অন্ধকারে স্থানীয়দের উপর হামলা চালাতে পারে বলে আতংকে রয়েছেন। হাকিম ডাকাত গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এ আতংক কাটবেনা।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারী রাতে রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিম ও তার সশস্ত্র লোকজন বাড়িতে ঢুকে নুরুল আবছার নামে এক কিশোরকে অপহরণ করে তার আস্তানায় নিয়ে যায়। এরপর ডাকাত দল তাকে তালা ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। পরদিন ১ ফেব্রুয়ারী বন্দিশালা থেকে কৌশলে পালিয়ে আসে কিশোর নুরুল আবছার। গত বছর নুরুল আবছারের বড় ভাই তোফাইলকেও অপহরণ করে নিয়ে গুম করে এই হাকিম ডাকাত। অদ্যাবধি তার কোন খোঁজ নেই। এবিষয়ে অপহৃতের পরিবার কক্সবাজার আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলা তুলে নিতে পরিবারের স্বজনদের উপর একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে হাকিম ডাকাত।

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে সাধারন মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম এই রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম। এই ডাকাত মিয়ানমারের মংডু বড়ছড়া এলাকার জানে আলমের ছেলে। মাদক পাচার, অপহরণ, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ এসব যেন তার কাছে ঠুনকো বিষয়। তার বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজনের বেশী মামলা রয়েছে। বছরখানেক আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সদর ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলামকে বাড়ীতে ঢুকে হত্যাসহ একাধিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ইতিমধ্যে বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনী হাকিম ডাকাতের আস্তানায় একাধিক অভিযান চালিয়ে কয়েকজন সহযোগীকে অস্ত্রসহ আটক করে কারাগারে পাঠালেও এ দূর্র্ধষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম এখনো অধরা রয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় বহু বার আলোচনা হলেও এযাবৎ এভাবে সাহসী অভিযান পরিচালিত হয়নি। অপহৃত যুবকের পিতা আলহাজ্ব জহির আহমদ বলেন ‘ডাকাত আবদুল হাকিম মোবাইল ফোনে আমার ছেলের মুক্তির বিনিময়ে আমার কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দাবী করেছিল। এঘটনায় আমি আবদুল হাকিমকে প্রধান আসামী করে শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারী টেকনাফ মডেল থানায় মামলা (নং-১৫) দায়ের করেছি। এর আগে আমার ভাগিনা নুরুল আফসারকে অপহরণের ঘটনায় ৪ জনকে অভিযুক্ত করে টেকনাফ মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। পুলিশ অপহৃতের ঘটনায় ডাকাত দলের সহযোগী হিসাবে সন্দেভাজন মোঃ সেলিম (৩০), আনজুমান আরা বেগম (৩২) ও রোমানা আক্তার কাজল (২২) নামে তিনজনকে আটক করেছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি এতবড় জঘন্য ঘটনা সত্বেও কুখ্যাত হাকিম ডাকাত তার আস্তানার আশেপাশে দলবল নিয়ে অবস্থান করছে। স্থানীয় কতিপয় সহযোগী তাদের কাছে নিয়মিত রসদপাতি পৌঁছে দিচ্ছে।