প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রামু সেনানিবাসের দশ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির সাথে কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সভা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি, দুপুরে রামু সেনানিবাসের অতিথিভবনে উক্ত মতবিনিময় হয়।

মতবিনিময়কালে জিওসি মেজর জেনারেল মোহাঃ মাকসুদুর রহমান (পিএসসি) বলেন, আপনারা আসাতে আমি আনন্দিত। এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের সবাইকে এভাবে মিলেমিশে বাঁচতে হবে। আমরা কে কোন ধর্মের অনুসারী সেটা বড় কথা নয়। সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, তার নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিতে বিচার ও গ্রহণ করতে হবে। ভাল মানুষ আর খারাপ মানুষ। মানুষ এই দুই প্রকারেরই হয়। আমাদেরকে ভাল মানুষ হতে হবে।

ধর্মচর্চা বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিজের ধর্ম বিশ্বাস অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না। এটা নির্ভর করে আমাদের আচরণের উপর। আপনি ভাল হলে আপনার ধর্মের প্রতিও আমার আকর্ষণ বাড়বে, জানার আগ্রহ জন্মাবে। আর আমি ভাল হলে আমার ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আপনার আকর্ষণ এবং আগ্রহ বাড়বে। এখানে ধর্ম কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোন যুক্তিকতা নেই।

সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সব ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে আমাদের বসতে হবে, আলাপ আলোচনা করতে হবে। সামনে আমরাও উদ্যোগ নিচ্ছি। আপনাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের সবসময় খোঁজখবর থাকে। আমরা সবসময় সতর্ক এবং সজাগ আছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোন কর্মকান্ডকে আমরা সহ্য করব না এবং প্রশ্রয় দেবনা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিপীড়নকে আমরা ঘৃণা এবং ধিক্কার জানাই। কিন্তু তারা খারাপ মানুষ বলে আমরাও তো খারাপ হতে পারিনা। পৃথিবীর কোন ধর্ম তার অনুসারীকে কুশিক্ষা দেয়নি। মানুষকে নির্যাতন করার শিক্ষা দেয়নি। মানুষ যে অপকর্ম করে এর দায় কেবল তার, ধর্মের নয়।

এসময় পরিষদের পক্ষে সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, জন্ম থেকেই মানুষ লোভ, দ্বেষ, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি বিকার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এগুলোর তাড়নায় মানুষ অপকর্ম করে বসে। জন্মের অনেক পরেই মানুষের সাথে ধর্মের পরিচয় ঘটে। অথচ এই সকল বিকার থেকে মুক্তি লাভ করার শিক্ষাই ধর্ম দিয়ে থাকে। কেউ ধর্মের সারবাণী পালন না করলে কিংবা অপকর্ম করলে এর দায় ধর্মের নয়। আমরাও রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধে জোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি।’

এসময় প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু পরিষদের পক্ষে জিওসি মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান। এর আগে কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের পক্ষে জিওসিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর পরপর রামু, সদর, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া এবং মহেশখালী উপজেলা শাখার পক্ষ থেকেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এর পরে পরিষদের পক্ষে জিওসিকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান জানান, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমর বিন্দু বড়–য়া (অমল)।

এসময় জিওসি মহোদয় উপস্থিত ভিক্ষুসংঘের হাতে ব্যবহার্য উপহার সামগ্রী তুলে দেন। একই সাথে পরিষদের সকল সদস্যদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।

মতবিনিময়কালে পরিষদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথের, ভুবনশান্তি ১০০ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি ও বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনাকেন্দ্রের অধ্যক্ষ ভদন্ত করুণাশ্রী মহাথের, রামু সীমা বিহারের ভদন্ত শীলপ্রিয় থের, ভদন্ত ধর্মপাল ভিক্ষু, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু, সাধারণ সম্পাদক অমর বিন্দু বড়–য়া (অমল), সিনিয়র সহ-সভাপতি, শুভংকর বড়–য়া, সহ-সভাপতি অশোক কুমার বড়–য়া, দুলাল বড়–য়া, আলহারি রাখাইন, উ থোই অং রাখাইন, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অরুণ বড়–য়া, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপক বড়–য়া বিটু, শিক্ষক মিলন বড়–য়া, রাজু বড়–য়া, পটল বড়–য়া, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কেতন বড়–য়া, দপ্তর সম্পাদক রাসেল বড়–য়া, নির্বাহী সদস্য ভুলু বড়–য়া, রামু উপজেলা শাখার সভাপতি রিটন বড়–য়া, সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়–য়া, অর্থ সম্পাদক তাপস বড়–য়া প্রমূখ।