বাংলাট্রিবিউন:
প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর প্রধান বা রাষ্ট্রদূতদের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া এবং রাষ্ট্রদূতদের হাত থেকে আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন মিশনে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডার, অর্থনৈতিক ক্যাডার ও তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায়। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বৈঠকটি সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পররাষ্ট্র সচিবকে দুপুর ১২টায় সেখানে উপস্থিত হয়ে মতামত জানানোর জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য প্রশাসন ক্যাডার, অর্থনৈতিক ক্যাডার ও তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে- তাদের (এসব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের) বিভিন্ন মিশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ আছে এবং অন্যান্যদের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে তাদের দায়িত্ব পালনে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে জনপ্রশাসন সচিবের সভাপতিত্বে এ ধরনের আরেকটি সভা হয়েছিল কিন্তু এবারের সভাটি খোদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে আহ্বান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন- পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করেন না কিন্তু তারা লিখিত অভিযোগ করেন না।’

অসহযোগিতার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অসহযোগিতার মাত্রা যদি এতই তীব্র হয়, তবে তারা লিখিত অভিযোগ করেন না কেন ?’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী, যে কোনও দূতাবাস সুস্পষ্টভাবে পরিচালনার জন্য দু’টি জিনিস অপরিহার্য। প্রথমটি হচ্ছে, সংস্থার প্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রদূতের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তার কাছে আর্থিক ক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু এই দু’টি বিষয়ে আপত্তি করছে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা চান, তাদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন রাষ্ট্রদূতের হাতে তৈরি না হয়ে বরং নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঢাকায় থেকে তা তৈরি করবে।’

দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের নিজের তত্ত্বাবধানে একটি পরিচালন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে যার মাধ্যমে আয়-ব্যয় পরিচালনা করা হয় কিন্তু তারা (অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা) চান তাদের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট যার পরিচালন ক্ষমতা নিজ নিজ অফিসারের কাছে থাকবে।

এ ব্যাপারে প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষমতার এই দ্বন্দ্ব নতুন কিছু না। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ভিন্ন চোখে দেখে।’

তিনি বলেন, ‘একটি দূতাবাসে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা যদি ভালো কাজ করে তবে প্রশংসা পায় রাষ্ট্রদূত।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘একজন লেবার কাউন্সিলর যদি দর কষাকষি করে কোনও দেশে ৫০ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান করতে পারে তবে তার সঙ্গে সঙ্গে এ কাজের প্রশংসা রাষ্ট্রদূতও পাবেন। এক্ষেত্রে অসহযোগিতার প্রশ্ন আসছে কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্ট লেখার ক্ষমতা যদি রাষ্ট্রদূতের না থাকে, তবে দূতাবাসে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হবে। কারণ, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রদূতের কথা মানতে চাইবেন না।’

চীনে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘বিদেশে যেসব দূতাবাস আছে, সেগুলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং স্বাভাবিকভাবে সেখানে যারা কর্মরত আছেন তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনেই থাকা উচিত।’

দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকারের রুলস অফ বিজনেস অনুযায়ী বিদেশি সব ধরনের যোগাযোগের সমন্বয় করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিন্তু বাস্তবে অন্য মন্ত্রণালয়গুলি এটি ভঙ্গ করে অহরহ বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।’ দেশের অভ্যন্তরে যে রুলস অফ বিজনেস আছে, সেটি মেনে চললে দূতাবাসের সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।