ইমাম খাইর, সিবিএন:
চাকুরী, গৃহকর্মীসহ বিভিন্ন কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গা যুবতিদের কৌশলে পাচার করা হচ্ছে। উখিয়ার কুতুপালং, নারপাড়া, কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি এলাকা কেন্দ্রীক গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা পাচারকারী সিন্ডিকেট। পাচার কাজে বেশিরভাগ বাংলাদেশী নারীদের ব্যবহার করা হয়। পুরুষরা থাকে পাচারের অন্তরালে। তবে, সড়ক পথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাসী বেড়ে যাওয়ায় পায়ে হেটে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পাচারে ২০/৩০ জনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা যুবতি-নারীদের নিয়ে ব্যবসা করছে। পাচার কাজে ব্যবহার করা হয় বাকপটু, চালাক-চতুর শ্রেনীর বাংলাদেশী নারীদের। সিন্ডিকেটে রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাও। ক্যাম্প থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা যুবতিদের গন্তব্যে পৌঁছিয়ে দেয়া পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা দেখভাল করে। মাঝপথে কেউ আটক হলে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা। নানা কৌশলে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। ছাড়াতে ব্যর্থ হলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ব্যবহার করা হয়। আর মুঠোফোনে নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো টীম।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে উখিয়ার সোনারপাড়া বাজারের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সরকার যখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দিয়েছে, তখন একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা যুবতিদের বাংলাদেশী সাজিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিনিময়ে দালালরা মাথাপিছু হাতিয়ে নিচ্ছে ১০/১৫ হাজার টাকা। সেই টাকার ভাগ যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটেও।
এদিকে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে দুই রোহিঙ্গা যুবতিকে পাচারকালে মিনু আরা আক্তার (মিনু) নামে দালালকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা। বুধবার (৭ ফ্রেরুয়ারী) দুপুরে উখিয়া সোনারপাড়া বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একরামুল ছিদ্দিক তাকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। দালাল মিনু আরা আক্তার কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্প হাঙ্গরপাড়া বাসিন্দা আলী আহমদের মেয়ে। অন্যদিকে আটক রোহিঙ্গা যুবতি ফারেসা আক্তার ও দিলসান বেগমকে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা কুতুপালং ক্যাম্পের এ-৩ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল আলমের মেয়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে দালাল মিনু আরা আক্তার (মিনু) স্বীকার করেছে, ২ রোহিঙ্গা যুবতী তার আতœীয়। তাদেরকে বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে। তবে আটক হওয়া ২ রোহিঙ্গা যুবতী জানায়, মিথ্যা প্রলোভনে তাদের ক্যাম্প থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল মিনু আরা আক্তার। তবে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার সঠিক কিছুই জানাতে পারেনি।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিনু আরা আক্তার চিহ্নিত একজন রোহিঙ্গা পাচারকারী। সে প্রায় সময় ফুসলিয়ে রোহিঙ্গা যুবতীদেরকে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে থাকে। পাচার কাজ তার নেশা ও পেশা।
অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা যুবতীদের ক্যাম্প থেকে নিয়ে গিয়ে পতিতাবৃত্তির মতো ঘৃণিত কাজে ঠেলে দিচ্ছে পাচারকারী সিন্ডিকেটটি। শুধু তায় নয়, বিভিন্ন অংকের টাকার চুক্তিতে বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবেও পৌঁছিয়ে দেয়ার কাজ করে পাচারকারী নারী মিনু আরা আক্তারের মতো অসংখ্য চিহ্নিত দালাল।
উখিয়া সোনারপাড়া পুলিশ চেকপোস্টের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মহিউদ্দিন জানান, স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় ১ জন পাচারকারীসহ ২ রোহিঙ্গা যুবতীকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। যাচায় বাছাই করে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।
উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, আটক দালালকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং দুই রোহিঙ্গা যুবতিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পাচার কাজে আরো কারা জড়িত আছে, তা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।