শাহেদ মিজান , সিবিএন :
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ ৮ ফেব্রুয়ারি। এই রায়কে ঘিরে একটি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে দেশজুড়ে। এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া হয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়ে বাধ্য হয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে রায়কে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় হার্ডলাইনে রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কয়েক দিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখা গেলেও গতকাল বুধবার থেকে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সকাল থেকে কক্সবাজার শহরসহ জেলার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ স্থানে পুলিশ ও বিজিবি ও র‌্যাব মহড়া দিচ্ছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাব।
জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রায় কি হবে তা আমরা কেউ জানি না। কারণ আদালতের রায়তো আগে জানার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকার এই রায়ের উপর অনুমান নির্ভর হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় চালাচ্ছে। যার কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছে। তাদেরকে মিথ্যা মামলায় আসামী দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেছে। শুধু তাই নয়; আমাদের জেলা কার্যালয় দু’দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। উপজেলায় পর্যায়েও বিএনপি কার্যালয় ঘিরে রাখায় গ্রেফতার আতঙ্কে কেউ যাচ্ছেন না।’
কিন্তু জেলা পুলিশের দাবি, শান্তি-শৃঙ্খলা বাজায় রাখতে পুলিশ নিয়মিত তৎপরতা চালালেও বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে তারা বাধা দিচ্ছে না। নাশকতা এড়াতে বিএনপির কার্যালয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা দিন ধার্য্য করার পর থেকে বিএনপি জনমনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এই রায়কে ঘিরে সরকার ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি নানা ধরণের বক্তব্যের কারণে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রায় পরবর্তী ‘বিশৃঙ্খলা’ রোধে সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি এবং বিএনপিরও পাল্টা জবাবের কারণে এই উৎকণ্ঠা বেড়েছে। কেননা সরকার ও বিএনপি মুখোমুখী হলে দেশে আবার একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা সবার মনে। এই পরিস্থিতিতে দেশে আবার অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। বেশ কয়েকজন লোকের সাথে কথা বলা এমন প্রতিক্রিয়াই পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে জেলাজুড়ে টহল জোরদার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীরও টহল দেখা যাচ্ছে। কক্সবাজার শহরের বিএনপি কার্যালয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার রায়কে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ অত্যন্ত সজাগ থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘রায়কে ঘিরে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার এক সাথে কাজ করবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। কোনো নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না। যেখানে নৈরাজ্য সেখানে অভিযান হবে।’
বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার এম. এম আনিসুর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার প্রেক্ষিতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন থেকে বিজিবির সহায়তা চাওয়া হয়। এই প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সব পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি সজাগ থাকবে।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। তাই আমরা আশা করছি বেগম জিয়া মামলা থেকে খালাস পাবেন। তবে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হলে আসবে কর্মসূচি। ঘোষণা আগেই রায় কেমন হবে তা তো জানা যায় নায়। সুতরাং কর্মসূচীও আগেভাগে নেয়া যায় না। রায়ের পর পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠান্ডা মাথায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়া হবে।’
জেলা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আমাদের কোনো কর্মসূচী নেই। এটা সরকারের বিষয় প্রশাসনই তা দেখবে। তারপরও কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে নাগরিক দায়িত্ব দায়িত্ব হিসেবে আমরা প্রতিহত করবো।’