বাংলাট্রিবিউন:
কারাগারকে শুধু সাজা কার্যকরের স্থান হিসেবে নয়, সংশোধনাগারে পরিণত করতে আরেক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ কারা অধিদফতর। বন্দিদের জন্য পরিবারের আরও কাছাকাছি থাকতে চালু করা হচ্ছে মোবাইল ফোন সেবা। ফলে কারাগার থেকেই স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন বন্দিরা।

পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চালু হচ্ছে এই সেবা। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সার্ভার স্থাপনসহ মোবাইল ফোন সেবার জন্য সেখানে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই সেবায় কোনও কারিগরি ত্রুটি রয়েছে কিনা তা এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কারা মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হলেই চালু হয়ে যাবে এই সেবা। এর সফলতার ওপর নির্ভর করে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের অন্যান্য কারাগারে যুক্ত হবে মোবাইল ফোন সেবা।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের সপ্তম পর্বে কারাবন্দিদের ফোনে কথা বলা সংক্রান্ত ‘প্রিজন লিংক’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। আইজি প্রিজনস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তারিখ নির্ধারণ করা হলেই এর উদ্বোধন হবে।

জেল সুপার মঞ্জুর হোসাইনের ভাষ্য, “এটুআই’র সহযোগিতায় আমরা একটি সফটওয়্যার সাজিয়েছি। এর মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের বন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। সেজন্য সফটওয়্যার তৈরি, সার্ভার স্থাপনসহ আমাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন কোনও ত্রুটি আছে কিনা নিজেদের মধ্যে কথা বলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি আমরা। তবে এখনও কোনও বন্দি এর মাধ্যমে কথা বলেননি।”

বন্দি হিসেবে কেউ কারাগারে এলেই তার কাছ থেকে পরিবারের দুটি নম্বর নেওয়া হবে। ওই দুটি নম্বরে মাসে দু’বার করে পাঁচ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলতে পারবেন তিনি। কারাগারে ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভেরিফায়েড হওয়ার পর ওই দুটি নম্বরে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যাবে।

এই সেবা চালু হলে কারাগারে অবৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন টাঙ্গাইল জেল সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসাইন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই নম্বর দুটি হতে হবে বন্দির মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা এমন একান্ত আপনজন। এর বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হবে না। বন্দিরা যেন পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে পারেন বা নিজের অবস্থা তাদের জানাতে পারেন, এজন্য এই মোবাইল ফোন সেবা চালু করা হচ্ছে।’

টাঙ্গাইল জেল সুপার আরও জানান, প্রথমে বন্দি তার পরিবারের তিন জনের নম্বর দিতে পারবে এমন পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা কমিয়ে আনা হয় দুটিতে। এছাড়া ঠিক কত মিনিট স্বজনদের সঙ্গে বন্দিরা কথা বলতে পারবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে এই সেবা উদ্বোধনের আগে তা নির্ধারণ করা হবে।

পাঁচ মিনিট হোক আর ১০ মিনিট, প্রত্যেক বন্দির জন্যই থাকবে নির্ধারিত সময়। এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে স্বজনদের জানিয়ে রাখবে— কারাবন্দি ওই সময় কথা বলবেন। তাই তখন যেন তাদের চাইলেই পাওয়া যায়।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারজানা গেছে, কারাগারের অভ্যন্তরে স্থাপিত বুথ থেকে কথা বলার সুযোগ পাবেন বন্দিরা। তবে এই বুথের ফোন থেকে বন্দি চাইলেই কোনও নম্বরে ডায়াল করতে পারবেন না। একইভাবে কোনও ফোন কলও আসবে না। এর কারণ মোবাইল সেবাটির জন্য বানানো সফটওয়্যারে আগে থেকে নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া থাকবে। এজন্য সেগুলো ছাড়া অন্য নম্বরে ফোন কল ডায়াল করা যাবে না।

মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসাইন বলেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে টেলিফোন বুথ থেকে বন্দি চেষ্টা করলেও অন্য কোনও নম্বরে কথা বলতে পারবেন না। স্বজনদের সঙ্গে বন্দির পুরো কথোপকথনটি পুরোটাই রেকর্ডের পাশাপাশি কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেই আলাপচারিতা লাইভ শুনবেন।’

জেল সুপার আরও জানান, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে চালু হতে যাওয়া এ সেবার জন্য প্রাথমিকভাবে থাকছে চারটি বুথ। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চার বন্দি। তাদের সংখ্যা হিসেবে ভবিষ্যতে বুথ বাড়ানো হবে। প্রাথমিকভাবে ৩০০-৪০০ বন্দির জন্য একটি করে বুথ নির্ধারণ করা হচ্ছে।

পাইলট প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি প্রসঙ্গে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (সদর দফতর) মো. বজলুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘এই সেবা চালু হলে বন্দিদের সঙ্গে পারিবারিক দূরত্ব কমে আসার পাশাপাশি স্বজনদের ভোগান্তিও কমতে পারে। পাইলট প্রকল্পটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। সংযোগ ও ট্রায়ালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। দ্রুতই এর উদ্বোধন হবে।’

জানা যায়, সাধারণ বন্দিরা এই সুবিধার আওতায় থাকলেও জঙ্গি আর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারও সঙ্গেই মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবে না।