মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাঁচ একর সরকারী বনভূমি আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে চিহ্নিত বনদস্যুরা। গত ২ ফেব্রেুয়ারী গভীর রাতে পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সংগ্রামের জুম এলাকার পূর্ব পার্শ্বে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অগ্নিসংযোগ করে প্রায় ৫ একর বনভূমি পুড়িয়ে দিয়েছে চিহ্নিত দূর্বৃত্তরা। ফলে ওই এলাকায় জীব বৈচিত্র ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল ৫ ফেব্রেুয়ারী সকালে স্থানীয় এলাকাবাসীরা বনাঞ্চল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি এ প্রতিবেদকসহ স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীকে অবহিত করে। পরে ওই দিন দুপুরে এ প্রতিবেদকের নেতৃত্বে তিনজন সংবাদকর্মী সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার আগুন দিয়ে বনায়ন পুড়ানোর সত্যতা যায়।

এদিকে, আগুন দিয়ে সরকারী বনাঞ্চল পুড়ানোর ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও সরকারী বনে অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বন বিভাগ! বন নিধনের এ এহেন ন্যাক্কনজনক ঘটনায় বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে পেকুয়ার পরিবেশবাদী সচেতন মহল। বনাঞ্চলে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে জড়িতদের রক্ষায় স্থানীয় বনবিট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা চেষ্টা চালালেও সংবাদকর্মীরা খবর পাওয়ায় তাদের সেই ‘চেষ্টা’ ভেস্তে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সংগ্রামের জুম এলাকার পূর্ব পার্শ্বে বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এসব বনাঞ্চলে বিগত ২০০৬ সালে বিশ্বব্যাংক ও সরকারী অর্থায়রে সামাজিক বনায়নের আওতায় আগর বাগান সৃজন করা হয়েছিল। বন বিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের অধীন বারবাকিয়া বন বিট ও টইটং বন বিটের অর্ধীনে ওই দুই ইউনিয়নের পূর্ব অংশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন বিপুল পরিমাণ সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন রয়েছে। এসব বনভূমি দখল করে বসতিসহ নানান ধরনের স্থাপনা তৈরী হলেও নিশ্চুপ রয়েছে বন বিভাগ। বন বিভাগের রহস্য জনক নিরবতার কারণে বনভূমি জবন দখলকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় টইটং ও বারবাকিয়া ইউনিনের পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও ২০০৬ সালে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রেুয়ারী গভীর রাতে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা চুরি-ডাকাতি, বন নিধনের অপরাধে দায়েরকৃত প্রায় ডজন মামলার আসামী নজির আহমদের পুত্র জাফর আলম, তার পুত্র আলমগীরের নেতৃত্বে একদল দৃস্কৃতিকারী সংগ্রাম জুম এলাকার পূর্ব পাশ্বে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫ একর বনায়নে অগ্নিসংযোগ করে। এলাকাবাসীরা জানান, সংগ্রামের জুমের পূর্ব পার্শ্বে সংরক্ষিত বনের প্রায় ৫ একর বনভূমি ৬০ হাজার টাকায় বনদস্যু জাফর আলম স্থানীয় ইবনে আমিনের পুত্র প্রবাসী আবু ছালেকের কাছে বিক্রি করে দেন।

এদিকে বনে সারারাত আগুন জ্বললেও ঘুম ভাঙ্গেনি খোদ বন বিভাগের! স্থানীয়রা বন বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করলেও ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে ফোনে অবহিত করেন এ প্রতিবেদক। এরপর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন বিভাগের পদুয়া অঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক (এমিএফ) ফাহিম মাসুদক নির্দেশ দেন।

এসিএফ ফাহিম মাসুদ জানান, বারবাকিয়ার সরকারী বনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরী করার জন্য তিনি রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা না করে সাধারন ডায়েরী কেন এ প্রসঙ্হে জানতে চাইলে তিনি বলেন‘ আগে থানায় সাধারন ডায়েরী করা হবেভ তারপর কারা কারা বনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করা হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেকুয়ার বারাবকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পেকুয়া থানায় গতকাল সোমবার রাতে সাধারন ডায়েরী করেছেন। বন নিধনকারীদের সাথে আঁতাতের বিষয়টি অস্বীকার করে এ বন কর্মকর্তা বলেন‘ বনে অগ্নিসংযোগকারী যে হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবেনা।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ‘ বন পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।