সাদ্দাম হোসাইন,টেকনাফ :

টেকনাফে রবি মৌসুমে ১৩শ ২০হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাহাড়ে চাকমা পল্লীর স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা পারিবারিক চাষাবাদে সহায়তায় এগিয়ে আসায় পুরো এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।

সরেজমিনে উপজেলার হোয়াইক্যং পাহাড়ী জনপদ হরিখোলায় স্বর্গীয় মংছা মং চাকমার পুত্র গইজ্জা অং চাকমা (৬০) এবং মিয়াং ছিং চাকমা (৫০) এর সংসারে ৩ ছেলে এবং ৩ মেয়ের আগমন ঘটে। সহায়তা সম্পত্তি কম হলেও দরিদ্রতার কারণে বড় ছেলেদের পড়াশুনা বেশী দূর করাতে পারেনি। বড় হয়ে দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন। বাড়ির ৩য় ছেলে মা-বাবার স্বপ্নে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করে। সে হোয়াইক্যং আলহাজ¦ আলী-আছিয়া হাইস্কুলে ৭ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। বড় মেয়ে পাপুরী চাকমা বাবা-মাকে পারিবারিক কাজে সহায়তায় জড়িয়ে পড়ে, মেঝ মেয়ে মেঘনা চাকমা (১৭) ও হোয়াইক্যং আলহাজ্ব আলী-আছিয়া হাইস্কুলে ৭ম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে প্রকাশি চাকমা (১২) হরিখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। দরিদ্র মা-বাবার সংসারে আর্থিক সংকটের কারণে জীবিকার তাগিদে বেশী জমি চাষাবাদ করতে পারেনি। চলতি রবি মৌসুমে ৬০শতক জমিতে খোরাকের জন্য ধান চাষাবাদ শুরু করেন। এমন কি ব্যয়বহুল শ্রমিকের মজুরী যোগাড় করতে না পেরে এই স্কুল পড়–য়া মেয়েরাই ধান ক্ষেতে গিয়ে বীজ চারা উত্তোলন করে নিজেরাই বপন করছে। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে মা-বাবাকে তাদের অব্যাহত সহায়তা পুরো চাকমা পল্লীর মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।

স্থানীয় অভি চাকমা জানান, আমাদের চাকমা সম্প্রদায়ের মেয়েরা এমনিতে পরিশ্রমী। কিন্তু স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা কাজ করতে তেমন দেখা যায়না। এই পরিবারের স্কুল পড়–য়া মেঘনা ও প্রকাশি চাকমা আতœসম্মানের উর্ধ্বে উঠে মা-বাবাকে পারিবারিক চাষাবাদের কাজে সহায়তা করে যাচ্ছে। এই বিষয়ে স্কুল ছাত্রী মেঘনা চাকমা হাস্যেজ্জ্বল মুখে বলেন,দাদা আমরা গরীব ঘরের ছেলে-মেয়ে। অবসর ও পড়াশুনার ফাঁকে নিজ পারিবারিক কাজে সহায়তা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি। আমি এই কাজে গর্ববোধ করি আর সব ছেলে-মেয়েদের পারিবারিক কাজে মা-বাবাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করি।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, চলতি সনে রবি মৌসুমে ১৩শ ২০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মূলত এই জমিতে বিরি-৪৭,২৮,বিরি-২১,বিনা-৮৮ প্রজাতির ধানের চাষাবাদ হয়। এই ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই উপজাতীয় চাকমা মেয়েরা কর্মঠ। তার উপরে স্কুলে অধ্যয়নের ফাঁকে মা-বাবাকে কৃষি কাজে সহায়তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা ধান, শাক-সবজিসহ এই জাতীয় কাজে উৎসাহ দিয়ে থাকি। সচেতন মহল মনে করেন, প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে অবসর সময়ে মা-বাবাকে কাজে সহায়তায় এগিয়ে আসা দরকার। এরফলে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আতœনির্ভরশীল হওয়ার চেতনা জাগ্রত হয়।