বাংলাট্রিবিউন : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন, আপনাদের সঙ্গেই আছি। আপনাদের সঙ্গেই থাকবো। তিনি এও বলেন, আমাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কোনও লাভ নেই। কিছু করতে পারবে না। অতীতেও আমাকে ভয়-ভীতি লোভ দেখিয়ে কোনও লাভ হয়নি।
শনিবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে আয়োজিত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। পুরো বক্তব্যের প্রথম অংশে সরকারের সমালোচনার নানা দিক তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। পরে বৈঠকের সমাপনী বক্তব্যও রাখেন তিনি। উভয় বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে দলীয় ও জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দেন খালেদা জিয়া। সরকার তাকে জেলে পাঠালেও যাতে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি না হয় সে বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
নির্বাচনের বিষয়ে ৬ দাবি:
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দাবিগুলো হচ্ছে:
১. নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
২. সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
৩. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
৪. ভোটকেন্দ্রে সব ভোটারকে আসার সুযোগ করে দিতে দিতে হবে।
৫. ভোটের সময় মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিতে হবে।
৬. কোনও কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা চলবে না।
‘দেখি, তারা কতটুকু যায়’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেখি তারা কতটুকু যায়। ছাড় দিচ্ছি। বেশি হলে আল্লাহই টান দেবেন। সময় থাকতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিন।’ তিনি বলেন, হিংসা-বিদ্বেষ-গুম-খুন বাদ দিয়ে মিলেমিশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বক্তব্যে তিনি ভাষা শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে নিহত লাখ-লাখ শহীদের কথা স্মরণ করেন। তাদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায় সে ব্যাপারেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মানুষ পরিবর্তন চায়, তবে ভোটের মাধ্যমে:
সার্বিক পরিস্থিতি থেকে, দুঃশাসন থেকে মানুষ মুক্তি চায়, জেল-জুলুম থেকে মুক্তি চায়, গুম-খুন থেকে মুক্তি চায় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তন আসতে হবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে, ভোটের মাধ্যমে, অন্য কোনোভাবে নয়।’ বিএনপির চেয়ারপারসন যুক্ত করেন,‘ সরকারের চিন্তা বেড়ে গেছে, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে তারা হেরে যাবে, এজন্যই তারা চিন্তিত। এজন্য সরকার বিএনপিকে মাইনাস করতে চায়। কিন্তু জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এজন্য তারা এটা পারবে না। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
এসময় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাছে তিনি জানতে চান, ‘আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ আছি কিনা? থাকবো কিনা?’ সবাই তখন ‘আছি’, ‘থাকবো’ বলে সায় দেন।
বিএনপির জাতীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সভার উদ্বোধন করেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। (ছবি: ফোকাস বাংলা)
জাতীয় ঐক্যের ডাক
অনুষ্ঠানে আবারও জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে গণতন্ত্রের জন্য জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
খালেদা জিয়া বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তবে এই আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। এসময় খালেদা জিয়া দেশের আপামর জনগণকে এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের সঙ্গে আছি। দেশের মানুষের সঙ্গেই থাকবো।’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশের মানুষ শান্তি চায়, প্রতিহিংসা চায় না। আমিও কোনও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। বহু সন্ত্রাস হবে, ষড়যন্ত্র হবে, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তারা অতীতে বিএনপিকে ভাঙার অনেক চেষ্টা করেছে। ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু,অনেক চেষ্টা করেও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপির কোনও ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, সশস্ত্র বাহিনী আছে। এ দেশের জনগণ আছে। দেশের বাইরে যারা আছেন তারা আছেন। কাজেই বিএনপির কোনও ভয় নেই, ভয়টা আওয়ামী লীগের।’
তিনি অভিযোগ করেন, প্রশাসনকে দলীয় নেতা-কর্মীদের মতো ব্যবহার করছে সরকার।
সিলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি প্রচারণার সমালোচনাও করেন খালেদা জিয়া। তার ভাষ্য,‘আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে প্রচার শুরুর কারণ কী?’ তিনি যুক্ত করেন, ‘নৌকা এমন ডোবা ডুবছে, যে তোলার জন্য এত আগে ভোট চাইতে হচ্ছে? হাত তুলে ওয়াদা করাতে হচ্ছে।’
বেশি হলে জেল হবে:
‘আমার বেশি হলে জেল হবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী-ভক্ত আছেন, তাদেরও জেলে যেতে হয়েছে। তবে সরকার বিএনপি ও দলটির নেতাকর্মীদের কিছুই করতে পারবে না। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই।’ সমাপনী অধিবেশনে দেওয়া চার মিনিটের বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন তিনি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে রক্ষা করা। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা যাই কিছু দেখাক না কেন, আপোস করা চলবে না। আমি সকালেও বলেছি, এখনও আবার বলছি, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকবো।’
দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠক সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। এদিকে, এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে হোটেলটির ভেতর ও আশেপাশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য মোতায়েন ছিল। এসময় হোটেলের বাইরে অপেক্ষমাণরত অবস্থায় দলটির ২২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।