বাংলাট্রিবিউন :

মঙ্গলবার হাইকোর্ট এলাকায় আটক বিএনপির দুই কর্মীকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় শাহবাগ থানায় দুইটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলা দুইটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ শীর্ষ নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দুইটি দায়ের করেছেন শাহবাগ থানার এসআই চম্পক চক্রবর্তী ও এসআই রহিতুল ইসলাম। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে মামলা দুইটি দায়ের করা হয়।

চম্পক চক্রবর্তীর দায়ের করা মামলায় রুহুল কবির রিজভীকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলাটিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করা হয়।

এই মামলায় পুলিশের কাজে বাধা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

রহিতুল ইসলামের দায়ের করা মামলার আসামিরাও প্রায় সবাই একই। এই মামলায় গয়েশ্ব চন্দ্র রায়কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। রুহুল কবির রিজভীকে করা হয়েছে দুই নম্বর আসামি। তবে এই মামলায় ৮৫ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।

এই মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে তিনটার সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কদমফুল ক্রসিংয়ে উপস্থিত হয়। তখন আসামিরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ মিছিলকারীদের মধ্য থেকে ওবায়দুল হক নাসিম ও করিম সরকারকে গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে তোলে। এসময় আসামিরা প্রিজন ভ্যানের দরজার তালা ভেঙে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া, প্রিজন ভ্যানের গ্লাস ভেঙে চালককে আহত করে।

আসামির তালিকায় আরও যারা

এসআই চম্পক চক্রবর্তীর দায়ের করা মামলার অপরা আসামিরা হলো বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক করিম সরকার, কলাবাগান এলাকার সাবেক কমিশনার সিরাজউল ইসলাম, ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সেক্রেটারি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নবী উল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি ইসহাক সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান তালুকদার, সেক্রেটারি বাশার, শাহবাগ থানা বিএনপির সেক্রেটারি হান্নান, শাহবাগ থানা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম টিটু, ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মোহন মোল্লা, শাহবাগ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইকবাল হোসেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম চন্দন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জাহিদ হোসেন নবাব, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি জাকির হোসেন মিন্টু, শ্রমিক দলের সেক্রেটারি মুন্না, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বঙ্গবাজার ইউনিট বিএনপির আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক বাবুল, সদস্য ঝুনু, যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমিনুল হোসেন পলক, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বঙ্গবাজার ইউনিট বিএনপির সদস্য ইমাম হোসেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক ইউসুফ মিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল, কামরাঙ্গীরচরের মনির হোসেন, শেরেবাংলানগর থানার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য সালাউদ্দিন, ঢাকা উত্তর মহিলা দলের সাবেক সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, বাড্ডা থানা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক রেহানা সুলতানা আরজু, রামপুরা থানা কৃষকদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আরিশ, তুরাগ থানা বিএনপির কর্মী কবির হোসেন, খোকন সরকার, মগবাজার এলাকার ছাত্রদলকর্মী শামিম আহম্মেদ, তুরাগ থানার ছাত্রদলকর্মী বুলবুল আহম্মেদ, মিরপুর-১৩ এলাকার ছাত্রদল সদস্য ইমরান হোসেন, রমনা থানা ছাত্রদলকর্মী রফিকুল আলম মনু, কাফরুল থানা ছাত্রদলের সদস্য ফাইজুল ইসলাম নোমান, পল্টন এলাকর বিএনপিকর্মী শরিফ, মানিকগঞ্জ সদর থানা বিএনপিকর্মী সাইফুল হক, পল্টন থানা বিএনপি নেতা গাজী হাবিব হাসান, পল্লবী থানা বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান, উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সহসভাপতি শাহ আলম, চকবাজার থানা বিএনপি নেতা আব্দুল্লা নূর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল তালুকদার খোকন, কামরাঙ্গীরচর থানা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক জসিম, বাড্ডা থানা শ্রমিক দলের সদস্য আমজাদ হোসেন, কামরাঙ্গীরচর থানা শ্রমিক দলের সদস্য আলম মিয়া, মৌলভীবাজার রাজনগর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহম্মেদ, ঢাকা মহানগর ছাত্রদল পশ্চিমের সদস্য মনা, উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সদস্য মাহবুব খান, শ্রমিক দলের সদস্য সুজন মিয়া, বংশাল থানা ছাত্রদলের নেতা সৈকত রহমান, চকবাজার থানা বিএনপির নেতা ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ জুয়েল, রমনা এলাকার ছাত্রদলকর্মী নাইম হোসাইন, চাঁদপুরের কচুয়া ছাত্রদলের সভাপতি বুরহান উদ্দিন, খুলনার দৌলতপুর ছাত্রদলের সদস্য নবুয়াত আল মাহমুদ ইনু, চাঁদপুরের কচুয়া থানা শ্রমিকদলের সেক্রেটারি আজিজ আহম্মেদ, ওয়ারী থানা বিএনপির কর্মী মির মাহমুদুর রহমান, মিরপুর এলাকার শারমিন আক্তার মুন্নি, কচুয়া থানা বিএনপির সদস্য মোজাম্মেল হক লিটন, পুরান ঢাকার স্বামীবাগ এলাকার আলম, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য ইমরান মিয়া, উত্তরা পশ্চিম যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ আলী, গাজীপুর জেলা যুবদলের সদস্য জুয়েল, টঙ্গী যুবদলের সদস্য আলী হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল শাখার ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এনায়েতুল্লা শরীফ, নাটোরের সিংড়া ছাত্রদলের সদস্য আব্দুর রহমান জনি, মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জিল্লুর রহমান খান, ডেমরা এলাকার নজরুল ইসলাম টিটু, খিলগাঁও এলাকার রাহাদুল আলম খান, রমনা এলাকার গোলাম জিলানী চৌধুরী টিপু, মুন্সীগঞ্জের আল আমীন, নিউমার্কেট এলাকার আব্দুল মালেক, যশোর এলাকার সাকিউর রহমান সুমন, কেরাণীগঞ্জের কামরুল ইসলাম এবং চাঁদপুরের ছাত্রদল সদস্য আনোয়ার হোসেন।

চম্পক চক্রবর্তীর দায়ের করা মামলায় উপরোক্ত ব্যক্তিরাসহ উত্তরখান থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য বাবু খলিফা ও ঢাকা মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সেকেন্দার আলীকে আসামি করা হয়েছে।

আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজধানী রমনা থানায় দায়ের করা অপর এক মামলায় বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ ও হেলেনা জেরিনকেসহ শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। এই মামলার আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মাহমুদুল হাছান উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত ওই মামলার এক আসামিকে একদিনের জন্য জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ ও ৩৬ আসামিকে দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে, বুধবার দুপুর ৩টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে রমনা থানার পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম এই মামলার আসামি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ৩৮ জনকে আদালতে হাজির করেন। মামলার আসামিদের ১০ দিনের জন্য রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশের এই তদন্ত কর্মকর্তা।