সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:
কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর খাল হাজার বছরের ইতিহাসের অংশ এটি। এ খালকে কেন্দ্র করে এলাকার শিল্প নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠে। আশি দশকের শুরু থেকে ইসলামপুরে শিল্প কারখানা বিস্তৃত হতে শুরু করে। তখন থেকেই খালের দখল-দূষণ শুরু হয়। বর্তমানে এ খালের খাঁন ঘোনা পয়েন্ট হয়ে বেসোডিয়াম পেরিয়ে বাজারের স্লুইচ গেইট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে চলছে দখল ও দূষণ। শিল্প কারখানার হুমকিতে এক সময়ের খর¯্রােতা এই খালটি এখন মৃত প্রায়। ছোট খাট কার্গো বোট খুবই করুণ আবস্থায় চলাচল করছে।
একটা সময় ছিল জেলে-মাঝির প্রয়োজনে এ খাল রক্ষায় ভূমিকা রাখতো। কিন্তু শিল্পায়ানের ফলে দ্রুত খালের পরিধি কমে যেতে শুরু করে। এখন খাল রক্ষায় কারো ভূমিকা নজরে পড়ে না। অতীতে বৃহত্তর পোকখালীর গোমাতলীর একটা অংশ জুড়ে খালের ব্যাপ্তি ছিল। বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারী এ খাল দখল-দূষণে প্রভাবশালী বা শিল্প কারখানার মিল মালিকরা জড়িয়ে পড়ছে। শুধু দখল করেই থেমে থাকছে না। নিজেদের ইচ্ছেমত বিভিন্ন জায়গায় খালের গতিপথও পরিবর্তন করছে। আর দূষণের কারণে খালের জীব বৈচিত্র্যে কোন অস্থিত্ব এখন আর অবশিষ্ট নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, ইসলামপুর এলাকার বেশ ক’টি লবণ মিল কারখানা খালের দু’পাশের অংশে দখল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর বর্জ্য অপসারণ তো চলছেই। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে খালের গতিপথেরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন অংশে খালের অস্থিত্ব আবিষ্কার করা কঠিন।
তবে খাল দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে সংশ্লিষ্টরা জানান, খালের পাশের জমিই তাদের। দাগ-খতিয়ান অনুযায়ী খালের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েই ভরাট-নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও খালের উপরি অংশ পাবলিক স্কুল পয়েন্টে আরো কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টায় রয়েছে। এসব শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও দখলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে খাল। বন্ধ হয়ে পড়েছে নৌ চলাচল।
ইসলামপুর ধর্মের ছড়ার বাসিন্দা আক্কাস মিয়া জানান, ইসলামপুরের খালটি এক সময় নদীর মতো ছিল। এ খালটিকে ঘিরেই ব্যবসা বাণিজ্যে পরিচালনা করা হত। বর্তমানে দখলের শিকার খালটি সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এতে খালের অনেক অংশ বিলীন হয়ে পড়েছে।
খাঁন ঘোনার আবুল হেসেন জানান, এ খালে এক সময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া যেত। দূষণের কারণে কোন ধরনের জলজ প্রাণী খুঁজে পাওয়া যায় না।
নাপিতখালীর বাসিন্দা জসিম উদ্দীন জানান, খালের প্রশস্ততা ছিল ১শ ফুট। কিন্তু দখলের কারণে এখন খালের বিভিন্ন অংশ শুধু সরকারী কাগজ পত্রেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ইনফোর্সমেন্ট অভিযানের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খাল, বিল ও নদী দখল-দূষণের অভিযোগে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরণের অভিযান অব্যাহত আছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নোমান হোসেন জানান, খাল দখলদারদের তালিকা তৈরী করে দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।