শাহেদ মিজান, সিবিএন:
সড়ক দুর্ঘটনায় সুদিপ্তার নিহতের ঘটনা নিয়ে তার পরিবারের লোকজন চরম মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন সুদিপ্তার প্রেমিক জেকি কুমার সুশীলের পরিবার। সুদিপ্তার মৃত্যুর একমাত্র কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। এই ঘটনায় জেকির কোনো দায় নেই বলেও দাবি করেছেন তার পরিবারের লোকজন। এই ঘটনায় করা মামলা অত্যন্ত জঘন্য। এই মামলা এবং যেসব অপপ্রচার করা হচ্ছে তার ‘নাটের গুরু’ সুদিপ্তার চাচা এড. শ্যামল চৌধুরী বলে অভিযোগ করেছেন জেকির পরিবার। সোমবার শহরের এক রেস্তোঁরায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেকির পরিবার এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেকির মা চিত্রা সুশীল বলেন, ‘সুদিপ্তার পরিবারের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক সম্পর্ক। সেই কারণে সুদিপ্তা আমার অনেক আদরের ছিলো। তাকে আমি নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসতাম। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দু’পরিবারকে তছনছ করে দিয়েছে। এমন শোকের মুহূর্তে দালাল ও ষড়যন্ত্রকারীদের খপ্পরে পড়ে সুদিপ্তার পরিবার আমার নিরপরাধ ছেলে জেকির নামে মিথ্যা মামলা করে তাকে জেলে বন্দি রেখেছে। সবচেয়ে দু:খজনক কথা, জেকির নামে মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচার করে সুদিপ্তার আত্মাকে কষ্ট দিচ্ছে তারা।’
তিনি আরো বলেন, জেকি ও সুদিপ্তার পরস্পরের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ছিলো। এই কারণে কোনোদিন তাদের মধ্যে সামান্যতম মনোমালিন্য হয়নি। সুদিপ্তার মৃত্যুর একমাত্র কারণ নিছক একটি দুর্ঘটনা। অথচ সুদিপ্তার পরিবার তার মৃত্যু ও তাদের ভালোবাসা নিয়ে ঢাহা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অপপ্রচারের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দায়ের করে জেকিকে জেলে দিয়েছে। আমরা জানি একটি মহল স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আর এই অপচেষ্টার নাটের গুরু সুদিপ্তার চাচা এড. শ্যামল চৌধুরী।’
জেকির মা বলেন, ‘নিহত সুদীপ্তার পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক আছে। হতে পারে পরিবারের এমন সম্পর্কের কারণে ছেলে-মেয়েরা একে অন্যের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। তাদের সম্পর্কের কথা দুই পরিবার জানতাম। যে কোন অনুষ্ঠানে দুই পরিবার একে অপরের আতিথেয়তা গ্রহণ করতাম। যার সর্বশেষ প্রমাণ, গত ২৫ ডিসেম্বর সুদীপ্তা এবং তার মা গোপী চৌধুরী দু’জনই আমাদের বাসায় বেড়াতে আসেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার দিন প্রেমিকা সুদীপ্তাকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে ইনানী যাচ্ছিল জেকি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত: কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের মারমেড ইকো-রিসোর্ট সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে তারা। গুরুতর আহত সুদীপ্তাকে স্থানীয়দের সহযোগীতায় উদ্ধার করে দ্রুত উখিয়া এবং পরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে জেকি। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। দূর্ঘটনার পর প্রায় ৩ঘন্টা নিজের প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে চেষ্টা চালায় জেকি। সে নিজেই দূর্ঘটনার খবর সুদিপ্তার পরিবার ও আমাদের জানায়। যদি সে সুদীপ্তাকে হত্যা করতে চাইতো তবে সে পালিয়ে গেল না কেন ? এছাড়া গোপনে নিয়ে তাকে মারতে পারতেন। কারণ জেকি ডাকলেই সুদীপ্তা পাগলের মতো ছুটে আসতো জেকির কাছে। তারা অন্ধের মতো একে অন্যেকে ভালবাসতো। দিন দুপুরে হত্যা করতো না।’
দুর্ঘটনার স্থানে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জেকির মা বলেন, ‘ইনানী যাওয়ার পথে সুদীপ্তা চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যায়। কিন্তু দু:খের বিষয় প্রকৃত এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে স্বার্থান্বেষী একটি মহল। তারা চায় দুর্ঘটনাকে হত্যাকান্ড বলে চালিয়ে দিতে। ইতিমধ্যে সুদিপ্তার চাচা এড. শ্যামল চৌধুরীর প্ররোচনায় তার বাবা ঝুলন চৌধুরী একটি মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মূলত চাচা এড. শ্যামল চৌধুরী সুদিপ্তার পরিবারকে তছনছ করে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
জেকির মা জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে সুদিপ্তার পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই কারণে তারা একেক বার একেক ধরণের বক্তব্য দিয়েছে; যা একটির সাথে অন্যটির কোনো মিল নেই। তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, সুদিপ্তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান থেকে জেকিকে বের করে দেয়া হয়। এই কারণে জেকি প্রতিশোধ নিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। কেননা সুদিপ্তার জন্মদিন ছিলো ৩০ আগষ্ট। এর পরে আমরা দুই পরিবার এক সাথে বেড়াতে গেছি।’
জেকির মা গণমাধ্যমকর্মীরে কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছে দুর্ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার আহবান জানাচ্ছি। এতে একদিকে যেমন সমাজে সত্য প্রকাশিত হবে, তেমনি ন্যায় বিচার পাবে নিরাপরাধ জেকি। না হয় সুদিপ্তার আত্মা শান্তি পাবে না।’