বাংলানিউজ : হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের মতো চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সবাজার বিমানবন্দরেও নামবে বোয়িং ৭৭৭, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, বোয়িং ৭৭৭ এক্স, এয়ারবাস এ-৩৫০ ও এয়ারবাস এ-৩৮০ মডেলের বাণিজ্যিক জাম্বো জেট উড়োজাহাজ। এর ফলে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর হবে এ দুটি বিমানবন্দর।
তবে শাহ আমানতের তুলনায় কক্সবাজারই হবে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রধান বিমানবন্দর। বিশ্বখ্যাত এয়ারলাইন্স কোম্পানি এমিরেটস, ইতিহাদ, লুৎফানসা, টার্কিস এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া, কেএলএম, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, থাইএয়ার, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, চায়না ইস্টানের মতো এয়ারলাইন্স সংস্থাকে পরিকল্পনায় রেখে এ বিমানবন্দর তৈরির কাজ করছে সরকার। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকেও।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের হাব বা মূলকেন্দ্র ও পর্যটনকে সামনে রেখে বিমানবন্দর ২টিকে নির্মাণ এবং সাজানোর কাজ করছে সরকার। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের করার কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে শাহ-আমানত বিমানবন্দরকে জাম্বো জেট নামার উপযুক্ত করে তৈরির প্রকল্পও পাস হয়েছে একনেক সভায় (৯ জানুয়ারি)।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলেছে, শাহ আমানত বিমানবন্দরটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর। বর্তমানে বিমানবন্দরটিতে ‘ওয়াইড বডি’র (যেমন, বোয়িং ৭৭৭) এয়ারক্রাফট সীমিত লোড নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ সংখ্যা ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। বর্তমানে এ বিমানবন্দরে ২৯৩০ মিটার লম্বা রানওয়ে ও দু’টি টেক্সিওয়ে রয়েছে। এ অবস্থায়ই শাহ আমানতে বোয়িং ৭৭৭ ওঠানামা করছে। যদিও এরইমধ্যে ২০০০ সালের অ্যাসফল্ট ওভারল ক্ষয়ে গেছে।
পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিমানবন্দরটিতে রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে পরিবর্ধন, শক্তিশালী করার প্রকল্প দেয়া হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। চলতি মাসে ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকার এ কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। এতে বোয়িং ৭৭৭ এর চেয়েও বড় জাম্বো জেট পূর্ণশক্তি নিয়ে উড়তে ও নামতে পারবে। এ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬০ বর্গমিটার রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তিশালীকরণ, সাইড স্ট্রিপ গ্রেডিং এবং ড্রেন উন্নয়ন, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ করা হবে।
এদিকে এগিয়ে চলছে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজও। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের প্রথম ধাপ শেষ হবে। প্রকল্প অনুযায়ী, এ ধাপে বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট, প্রস্থ ১৫০ মিটার থেকে ২০০ মিটার করা হবে। এ ছাড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে টার্মিনালে আসার ১ লাখ ৯৭ হাজার টেক্সিওয়ে এবং রানওয়ের পিসিএন (পেভমেন্ট) শক্তিশালী করা হচ্ছে। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের প্লেন শুধু দিনের বেলায় অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারে। রাতে প্লেন ওঠানামার জন্য কোনো ধরনের লাইটিং ও নেভিগেশন যন্ত্রপাতি নেই। আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরের অংশ হিসেবে এ বিমানবন্দরে ভিওআর, ডিএমই, ৯০০ মিটার অ্যাপ্রোচ লাইটিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে, যাতে দিনের মতো রাতেও প্লেন অবতরণ করতে পারে। উন্নত প্রযুক্তির এসব যন্ত্রপাতি ফ্রান্স, জার্মানি এবং লাইটিং সিস্টেমের সর্বশেষ প্রযুক্তি ইতালি থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের অগ্নি-নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যাল কেনা হবে।
এ বিমানবন্দরে দেশীয় প্রকৌশলীদের সঙ্গে কোরিয়ান হল্লা করপোরেশনের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন সমান তালে। পুরো কাজের মান নিশ্চিত করতে কাজ করছে কোরিয়ান ইউশিং ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কনসালটেন্টরা।
হল্লা করপোরেশনের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তোফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কক্সবাজার বিমানবন্দরকে এ অঞ্চলের প্রধান বিমানবন্দর হিসেবে চিন্তা করছি।
এ প্রকল্পে রানওয়ের পিসিএন বৃদ্ধি (শক্তিশালীকরণ) করার ফলে ৩৫০ টনের বেশি ওজনের প্লেন এখানে নামতে পারবে। কাজ শেষ হলে এখানে ৭৭৭ বোয়িং, এ-৩৮০ এয়ারক্রাফট ওঠানামা করতে পারবে। শুরু থেকে এখানে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআরসহ বিশ্বের সব ধরনের বাণিজ্যিক এয়ারক্রাফট নামতে পারবে। যদিও এরই মধ্যে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ ওঠানামা শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজার আসতে, আবার এখান থেকে চলে যেতে পারবেন। ফলে পর্যটন শহর কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে সারা বিশ্বের। এয়ারপোর্টে থাকবে শামুক আকৃতির টার্মিনাল, যা এর সৌন্দর্যকে শতগুণ বাড়িয়ে দেবে। ফলে পাল্টে যাবে শহরের চিত্র। দেশের পর্যটন খাতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে লাভবান হবে সরকার।
মন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দর ছাড়াও এ এলাকায় বর্তমান সরকারের চলমান যেসব উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে, তার মধ্যে মাতারবাড়িকয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্রবন্দর, টেকনাফের সাবরাং, দমদমিয়া ও মহেশখালির সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটন ভিত্তিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কাজ শেষ হলে প্রচুর বিদেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন। এ কারণে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুরুত্ব পাবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।