হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ
প্রত্যাবাসনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার চার মাস পরেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি। ১৭ জানুয়ারী বুধবার ভোরে রাখাইনের বুছিডং থানার দুই শতাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়া সৈকত পয়েন্ট দিয়ে এপারে ঢুকেছে। একদিকে মিয়ানমার সরকারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা চলছে। অপরদিকে রাখাইন রাজ্যে মগ সেনাদের নির্যাতন ও পুরুষদের ধরে নিয়ে বিনা বেতনে শ্রমিক খাটানোর অভিযোগে এখনো প্রতিদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা।
জানা যায়, ১৭ জানুয়ারির বুধবার ভোরে রাখাইনের বুছিডং থানার দুই শতাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফের সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়া পাড়া সৈকত পয়েন্ট দিয়ে এপারে ঢুকেছে। তারা সকলে টেকনাফ বাস স্টেশনে এসে জড়ো হয়। বুছিডং থানার সিংদিপ্রাং গ্রামের রোহিঙ্গা ছৈয়দ আলমের পুত্র আবু ছৈয়দ (৩৫) বলেন ‘১২ জানুয়ারি ভোর রাতে বাড়ী থেকে বের হয়ে পাহাড়, বিল অতিক্রম করে এপারে আসার জন্য মিয়ানমার সীমান্তে পৌঁছি। আসার সময় সেনারা আমাদের টাকা, স্বর্ণালংকার কেড়ে নিয়ে এপারে আসতে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা করেনি। সেনারা পুরুষদের ধরে নিয়ে পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ করাচ্ছে। কোথাও কাজ করা যাচ্ছেনা। ফলে স্ত্রী, সন্তানরা অর্ধহারে অনাহারে ঘরে দিনাতিপাত করেছি। তাই আবারো ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে এপারে আশ্রয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি’।
একই এলাকার সনজিদা বেগম (৩০) বলেন ‘আমার স্বামীকে সেনারা ধরে নিয়ে ১০ দিন ধরে বন্দি রেখে কাজ করিয়েছে। কিন্তু কোন পারিশ্রমিক দেয়নি। এতোদিন ঘরের ছেলে মেয়েদের নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে ছিলাম’।
রোহিঙ্গা নারী নুরে জান্নাতের কোলে দুই মাসের ফুটফুটে শিশু। তিনি বলেন ‘এপাড়া থেকে ওপাড়া পালিয়ে অনেক সহ্য করে এতোদিন নিজের দেশের মাটি আঁকড়ে ধরেছিলাম। কিন্তু বর্বর মগ সেনাদের বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন নিপীড়ন থামছেনা। কাজ কর্ম না থাকায় চরম খাদ্য সংকটে থেকেছি। অবশেষে ক্ষুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এদেশের আশ্রয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি’।
পুঁইমালি গ্রামের ফয়েজুর রহমান বলেন ‘আমরা একসাথে ৩০ জন এসেছি। ৫দিন হেঁটে পাহাড়ী ও বিল অতিক্রম করে মিয়ানমার সীমান্তের কাঁটা তারের ঘেরা পার হয়ে নাইক্ষ্যংদিয়া সীমান্তে নৌকার অপেক্ষায় থেকেছি। পরে নৌকা পেয়ে জনপ্রতি ৫০ হাজার কিয়াতের বিনিময়ে এপারে ঢুকেছি’। পালিয়ে আসা সকল রোহিঙ্গাদের একই অভিযোগ।
টেকনাফ বাস স্টেশনে অবস্থান করা টেকনাফ মডেল থানার এএসআই রিংকন বলেন ‘সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৯১ জন রোহিঙ্গাকে রেজিষ্ট্রেশন তালিকায় লিপিবদ্ধ করেছি। পরে তাদের সকলকে বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে’।
আরও ২ শতাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
