গত ১৪, ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি কক্সবাজারের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেকুয়া উপজেলার মগনামায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে সৃষ্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি কূচক্রী মহল ভয়াবহ অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। যা আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে। তাই মগনামার উদ্ভূত পরিস্থিতি সর্ম্পকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, গনমাধ্যম, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সচেতন নাগরিকদের যাবতীয় বিভ্রান্তি এড়াতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আসল ঘটনা ব্যাখ্যা করা দরকার বলে মনে করছি।
দেশের প্রথম সারির শিল্প প্রতিষ্ঠান এস. আলম গ্রুপের সোনালী কার্গো লজিষ্টিক প্রা: লি: এর নামে ২০১১ সালে মগনামা ও উজানটিয়া মৌজায় প্রায় ৫০০ একর জমি ক্রয় করা হয়। এসব জমি দেখভাল করার জন্য শুরুতে এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ৭ বছর দায়িত্ব পালনের সময় ওই ব্যক্তি মগনামা ও উজানটিয়ায় খরিদকৃত জমি প্রতি বছরই একাধিক ব্যক্তিকে বাৎসরিক লাগিয়ত (ইজারা) দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে রাখতো। ইজারা নেয়া ব্যক্তিরা ওই জমির দখল নিয়ে দ্বন্ধ সংঘাতে লিপ্ত থাকতেন। এতে এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতিও সবসময় উত্তপ্ত থাকতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৫ সালে একই তফশিলের একই জমি একই বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয় দু’টি গ্রুপকে। এর মধ্যে এক গ্রুপে রয়েছে আবু হেনা মোস্তফা কামাল, নাজিম উদ্দিন, রুস্তম আলী ও খায়রুল এনাম। অপর গ্রুপে রয়েছে মো. আলমগীর, এস্তাজুল আজম, মনজুরুল আলম, রশিদ আহমদ, দেলোয়ার হোসেন, নুরুল আনোয়ার, ফরিদুল আলম, সমশুল করিম, জিয়া উদ্দিন, খাইরুল এনাম ও ইসমাইল। একই বছরে এ দুই গ্রুপ ছাড়াও আবু হেনা মোস্তফা কামাল নিজেই এসব জমি ফের ইজারা দেন হাবিবুর রহমান, জায়েদুল্লাহ, শাহাবুদ্দিন ও অলি আহমদকে। এভাবে একই জমি একই বছরে একাধিক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়ায় দ্বন্ধ সংঘাত শুরু হয়। এভাবে প্রতি বছরই সংঘাত চলতে থাকলে জমির মালিক এস. আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে ইজারাদারকে ডেকে নিয়ে হিসাব চাওয়া হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার ইজারা বাতিল করা হয়। পরে এস. আলম গ্রুপের কর্ণধার জনাব সাইফুল আলম মাসুদ সাহেব মগনামার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমি শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমকে ডেকে নিয়ে তাদের জমি দেখভাল করার জন্য লিখিতভাবে দায়িত্ব দেন। এর পর আমি নিয়মমতো উক্ত জমি সাধারণ চাষীদের মাঝে ইজারা দিই। ইজারাকৃত জমিতে গত দুই মাস পূর্ব থেকে চাষীরা লবণ চাষ শুরু করে। হঠাৎ করেই গত কয়েক দিন ধরে ‘কানফুল বাহিনী’ নামের একটি স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপকে ভাড়া করে ভুয়া চুক্তি নিয়ে এস. আলম গ্রুপের জমি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালান আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ অন্যরা। কানফুল বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন ২৪ মামলার আসামী জলদস্যু স¤্রাট ইউনুছ। এর অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ জমি সংক্রান্ত একটি বিষয়কে গোপন রেখে রাজনৈতিক রং ব্যবহার করে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে হয়রানীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে মগনামা থেকে বিতাড়িত পতিত দু’একজন নামধারি নেতা। তারা এস. আলম গ্রুপের জমি অবৈধভাবে দখল করতে রাজনৈতিক রং ছিটিয়ে অতিরঞ্জিত করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু আমার চেয়ারম্যানকালীন সময়ে মগনামায় রাজনৈতিক কোন সমস্যা কখনো হয়নি। এখনো নেই। যার প্রমাণ-মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং জেলা আওয়ামীলীগের আমার অভিভাবকতুল্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে আমার অত্যান্ত ভাল সর্ম্পক বিদ্যমান। তাদের পরামর্শ নিয়েই আমি মগনামা ইউনিয়ন পরিষদে সরকারের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান সরকার দলীয় নেতা ও সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার দুরত্ব নেই। সরকার বিরোধী কোন কর্মকান্ডের সাথেও আমি জড়িত নই। অথচ জমি সংক্রান্ত বিরোধকে আড়ালে রেখে রাজনৈতিক রং ছিটিয়ে কয়েকজন পতিত রাজনৈতিক নেতা আমাকে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর দেহরক্ষী, শিবির ক্যাডারসহ বিভিন্নভাবে চিত্রায়িত করার অপচেষ্টা করছে। এমনকি আমাকে ইয়াবা ব্যবসায়ি হিসেবে লিখতেও তারা পিছপা হচ্ছে না। সাংবাদিকদেরও এসব বিষয় সরবরাহ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, হাস্যকর ও মানহানিকর। এসব বিষয় দেখলেই বুঝতে বাকি থাকেনা যে, জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য যুদ্ধাপরাধীর দেহরক্ষী/শিবির ক্যাডার এমনকি জঙ্গি আখ্যা দিতেও একটি মহল পিছপা হচ্ছে না। আরও আর্শ্চয্যের বিষয় যে, আমার খালাতো ভাই চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসন থেকে বার বার পরাজিত হওয়া সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিও তাতে প্রকাশ্যে ইন্ধন দিচ্ছেন। মূলত: ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, এটি সম্পূর্ণ জমি সংক্রান্ত। এছাড়া এটিকে পারিবারিক বিরোধ বললেও ভুল হবে না। কারণ আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও ইউনুছ সর্ম্পকে আমার চাচা। আর সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি আমার খালাতো ভাই। এ অবস্থায় জমি বিরোধকে কেন্দ্র্র করে রাজনৈতিক রং দিয়ে ঘটনায় জড়িত না থাকা সত্ত্বেও আমাকে মামলার আসামী করা হয়েছে। অথচ জীবনে দেশের কোন থানা ও আদালতে আমার বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা জিডিও নেই। মূলত: ঘটনার দিন আমার চাচা ইউনুছের নেতৃত্বে কানফুল বাহিনীর সদস্যরা মগনামার কালারপাড়ায় চাষাবাদরত লবণচাষীদের লবণমাঠ থেকে জোরপূর্বক তুলে দেয়। এসময় সন্ত্রাসীরা চাষীদের পলিথিন ও পানি সেচের মেশিন নিয়ে যায়। ফলে চাষীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাদের একজন ঘটনাটি আমাকে জানালে আমি বিষয়টি তাৎক্ষনিক পেকুয়া থানার ওসিকে অবহিত করি। ওসি আমাকে লিখিত এজাহার দিতে বলেন। এ অবস্থায় ইউনুছের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আবারো লবণ মাঠের জমিতে হানা দিলে চাষীরা জড়ো হয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দেয়। সেখানেই ইউনুছ আহত হয়। এ ঘটনায় আমি নিজেও খুব মর্মাহত। সাবেক একজন চেয়ারম্যানকে এভাবে মারধর ও নাজেহাল করা চাষীদের উচিত হয়নি।
আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে আমার প্রিয় মগনামাবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে পুরো মগনামায় কোন অনিয়ম-দুর্নীতি, পরিকল্পিত সংঘাত সৃষ্টি, সাধারণ মানুষ, আলেম সমাজ, শিক্ষিত সমাজ কাউকে হয়রানী বা অপমান করেছি কেউ বলতে পারবে না। মগনামাবাসীই আমার প্রাণ। এ কারণে আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাতে চাই যে, আমাকে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে মামলার আসামী করা হয়েছে- তা আমি মেনে নিলাম। কিন্তু আমার প্রিয় মগনামার সাধারণ লোকজন ও নিরীহ চাষীদের যেন হয়রানী করা না হয়। ইতিমধ্যেই দায়েরকৃত মামলাটিতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় তৃণমূলের এক ডজনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ বিবৃতি দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এছাড়া আমার চাচা আবু হেনা মোস্তফা কামালকে অনুরোধ করছি যে, আপনি মগনামার সাধারণ মানুষের প্রতি সদয় হোন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুন। আপনার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করুন। একই সাথে মগনামায় সংঘঠিত পরিস্থিতি জমি সংক্রান্ত নাকি রাজনৈতিক, কারা অবৈধ দখলবাজ, সন্ত্রাসী তা সুষ্ঠু তদন্ত করে আসল ঘটনা খুঁজে বের করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, গণমাধ্যম ও সচেতন মহলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার এই বক্তব্যের স্বপক্ষে যাবতীয় কাগজপত্র ও প্রমাণ আমার হাতে রয়েছে। যে কোন স্থানে এসব প্রমাণে আমি সক্ষম হবো। ইনশাল্লাহ।

নিবেদক
শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিম
চেয়ারম্যান
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদ, পেকুয়া, কক্সবাজার।