মোঃ নাজিম উদ্দিন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম:
শীতে সবজি উৎপাদনের মৌসুম। সারা বছর সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া থাকলেও শীতের শুরুতেই দাম কমে আসে প্রতিবছর। তবে এবার ব্যতিক্রম হয়েছে শীত মৌসুমে। লাগাতার শীতে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে কমেনি সবজির দাম। এতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল নি¤œ আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে গত সপ্তাহ থেকে সবজির সরবরাহ বাড়ায় তেমনি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা দামও কমেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফেরায় ক্রেতাদের মুখেও ফিরেছে হাসি। সবজির পাশা-পাশি চালের দামও কিছুটা কমেছে। তবে ঝাঁঝ রয়েছে পেঁয়াজে। মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে পেঁয়াজের দাম।
গত বছর দেশের উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় দফায় দফায় বন্যা হওয়ায় পানিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় জুলাই মাসের আগে থেকে সারাদেশের নেয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে বেড়েছিল সবজির দাম। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সবজি চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় তখন থেকেই নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের ত্রাহি অবস্থা হয়ে আসছিল।
কেরানীহাট কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, এবার ‘লাগামহীন’ ছিল সবজির বাজার। আর কখনো সবজির বাজার এমন লাগামহীন চড়া ছিলনা। গত বছরের মাঝা-মাঝি থেকে নিত্যপণ্যের চড়া দামে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েছি। মনে করেছিলাম শীতের শুরুতে সবজির দাম কমবে। তবে কমেছে শীতের ৬ সপ্তাহ পর। যদিও অন্য বছরের তুলনায় দাম সামান্য বেশি হলেও এখন স্বাভাবিক হয়েছে।
দোহাজারী কাঁচা বাজারে ক্রেতা সাবের হোসেন বলেন, শীতের শুরুতে উৎপাদিত সবজির বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দাম ছিল চড়া। কিছু সবজির দাম তখন আরো বেড়েছিল। তখন দাম কমাটা স্বাভাবিক ছিল। ওই সময় কাঁচা মরিচের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত ক্রয় করেছি। তবে এখন সবজির দাম অনেক কমেছে। পেঁয়াজের দাম চড়া রয়েছে। গত শুক্রবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানীহাট, বাজালিয়ার বোমাংহাট, দেওয়ানহাট, বাংলা বাজার, জোটপুকুরিয়া বাজার, লোহাগাড়ার বটতলী, পদুয়া তেওরীহাট, দরবেশ হাট, চুনতী বাজার, বড়হাতিয়া সেনেরহাট, বাঁশখালীর গুনগুরি খাস মাহাল, চাম্বল বাজার, পুকুরিয়া বাজার, চন্দনাইশের দোহাজারী, বাগিচার হাট, কলেজ গেইট, বাদামতল, রৌশনহাট, পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালী সহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বেগুন ২৫ টাকা, দেশীয় আলু নতুন ৩০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা, চিচিঙ্গা ৪৫ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, মূূলা ১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদা কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেরানীহাট সবজি বিক্রেতা আব্দুল আলম বলেন, সবজির দাম অনেকটায় কমে এসেছে। তবে কিছুকিছু সবজির দাম রয়েছে। আমরা খুচরা বিক্রি করি।এখানে লাভের সংখ্যা কম।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে চালের দামে কোন পরিবর্তন আসেনি। আমদানি করা মোটা চাল (স্বর্ণা, বিআর-২৮, গুটি) প্রতিকেজি ৪৪ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৪৫টাকা। ইন্ডিয়ান ও বার্মার চাউল ৩৫-৩৬ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ অঞ্চলে উৎপাদিত নতুন চাউল কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আশুগঞ্জের চাউল আগের মতোই দাম রয়েছে।
চাউল ব্যবসায়ী আবু সৈয়দ বলেন, গত বছরের শুরুতে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে একের পর এক বন্যায় ফসল ক্ষেত নষ্ট হয়েছিল। এতে বাজারে সরবরাহ কমে আসায় দাম বেড়েছিল।
সাতকানিয়া ছদাহা শিশুতল পাইকারী নুর সবজি মান্ডারের মালিক এইচ এম সেলিম বলেন, শীতের প্রথম কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সবজির দাম লাগামহীন ছিল। এখন সরবরাহ বাড়ায় পাইকারী-খুচরায় সবজির দাম অনেকটায় কমে এসেছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।