ডেস্ক নিউজ:
আসন্ন ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি-জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা ও সিলেটে একক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পথ ধরে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে তারা একক প্রার্থী দেওয়ায় ২০ দলীয় জোটে সমালোচনা হয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একাধিক দায়িত্বশীল সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সব সিটি করপোরেশনেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোথাও জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে প্রার্থিতা উহ্য করা হবে। ডিএনসিসি উপ-নির্বাচনে মো. সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী দেয় জামায়াত। ইতোমধ্যে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা শুরু হয়েছে।
দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়— ঢাকা ও সিলেটের মতো বরিশাল, খুলনা, গাজীপুরেও জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া হবে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে কেন্দ্র থেকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসাইনকে। বরিশাল, গাজীপুর ও খুলনায় এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি।
রাজশাহী জামায়াতের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইন বিনোদপুর ইসলামীয়া কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার বাড়ি নগরীর মতিহার থানার ধর্মপুর এলাকায়।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইতোমধ্যে সব সিটিতেই প্রার্থী ঠিক করতে শাখাগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকায় মো. সেলিম উদ্দিন, রাজশাহীতে অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসাইনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি তিন সিটির প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে।

গত ৮ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে ডিএনসিসিতে একক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কোনও কোনও শরিক নেতা এ নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন। পরে বৈঠকে উপস্থিত জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘দল এককভাবে প্রার্থী দিয়েছে। এক্ষেত্রে দলের সঙ্গে আলোচনা করলে বিষয়টির সমাধান হবে।’ ওই বৈঠকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় শুরার একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু দর কষাকষির জন্য মেয়র হিসেবে প্রার্থিতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জোটের মনোনয়ন না পেলেও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে এগোনো যাবে।’

জামায়াতের প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ২০ দলীয় জোটের প্রায় অনেক নেতাই বিষয়টিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। যদিও কোনও নেতাই স্বপরিচয়ে উদ্ধৃত হতে রাজি হননি। অনেকে বলছেন, ‘দরকষাকষি করতেই প্রার্থিতা দেওয়া হচ্ছে এককভাবে। এক্ষেত্রে জোটের ওপর প্রভাব খুব বেশি না পড়লেও সম্পর্কে প্রভাব পড়বে। বিএনপির মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

যদিও জামায়াত মনে করছে, যেহেতু ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি, এ কারণে আগামীতে যে কোনও সিটিতেই আলোচনা না করলে জামায়াত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে না। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন স্থগিত থাকলেও দলটির সিদ্ধান্ত— স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থিতা করবেন মনোনীতরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশা করি, কোনও প্রভাব পড়বে না। ২০ দলীয় জোট হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। আমাদের সর্বাধিক বিবেচনা থাকবে, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী যিনিই হোন, তার জন্য চেষ্টা ও কাজ করবো।’

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এই সদস্যের ভাষ্য, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে আমরা প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে দলের কাজের ক্ষেত্র ও আমাদের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্থানীয় বিষয়গুলো কেন্দ্র থেকে নজরদারি আছে। আমরা সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে প্রার্থী, আগ্রহ ও শারীরিক অবস্থা থাকলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এরপরও আলোচনার পর এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’