রফিক মাহমুদ, উখিয়া:
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা যুবতীর সঙ্গে ছেলের বিয়ের পর ছেলে ও ছেলের বউকে পুলিশি হয়রানি থেকে দূরে রাখতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করায় রিটকারীকে একলাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে এই জরিমানার টাকা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী জমা না দিলে রিটকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। সোমবার (০৮ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত রিট খারিজ করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এবিএম হামিদুল মিসবাহ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চারগ্রামের বাবুল হোসেন। এর আগে গত ২৫ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই শোয়াইব হোসেন জুয়েল (২৫) ও রাফিজা (১৮) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় তারা নিকাহ রেজিস্ট্রি করতে না পারায় বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিকার চেয়ে ছেলের বাবা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। একইসঙ্গে রিটে মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তির বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়। কারণ এ নির্দেশনার কারণে বাবুল হোসেনের ছেলের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশি ছেলেদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মেয়েদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কোনও কোনও নিকাহ রেজিস্ট্রার অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকায় ‘বিশেষ এলাকা’ (কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম জেলা) নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বর-কনে উভয়ে বাংলাদেশি নাগরিক কিনা, বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে (জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে) বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব নিকাহ রেজিস্ট্রারকে নির্দেশনা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে। এ বিষয়ে গাফিলতি হলে দায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘ফরেইনার্স অ্যাক্ট অনুসারে বিদেশিরা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারে না। এছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করা যাবে না। কিন্তু এখানে আবেদনকারীরা দু’টি অপরাধ করেছেন। ওই মেয়েকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে নিয়ে এনেছেন। আবার বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হাইকোর্টে রিটও করেছেন। এ কারণে একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ টাকা ৩০ দিনের মধ্যে না দিলে ছেলের বাবা বাবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
গত বছরের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত নিধন শুরু হওয়ার পর ৯ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মানিকগঞ্জের চারিগ্রামের শোয়াইব হোসেন জুয়েল যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি রাফিজা (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা নারীকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে একটি মসজিদে বিয়ে করেন। বিয়ের ঘটনা জানাজানি হলেই জুয়েল ও রাফিজা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রাফিজার পরিবার মানিকগঞ্জের চারিগ্রামের এক ধর্মীয় নেতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই সময়েই রাফিজার সঙ্গে জুয়েলের প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানের বিষয়ে পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে কিছুদিন আগে রাফিজার পরিবারকে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ফিরে যেতে হয়। এ সময় জুয়েল কক্সবাজারের এক শরণার্থী শিবির থেকে অন্য শরণার্থী শিবিরে রাফিজাকে খুঁজে বেড়ান। একসময় পেয়েও যান। পরে মসজিদের ইমাম তাদের বিয়ে পড়ান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।