শাহেদ মিজান, সিবিএন:
দেশজুড়ে আলোচিত কয়েক ঘটনার পর এবার কক্সবাজারেই যুবককে রশি দিয়ে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দার নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে। খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দিকে হাত তোলার ‘অপরাধে’ এই নির্যাতন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের শিকার আয়াতুল্লাহ নামে ওই যুবক আহত হয়েছে। রোববার কক্সবাজার শহরে অদূরেই ঝিলংজার খরুলিয়ায় এই নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে। খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে এই নির্যাতনের ভিডিও ও ছবি পোস্ট করা হয়। তা পরে নানা জনের ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই নিয়ে পুরো দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ঘটনার শিকার আয়াত উল্লাহর ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবির খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র। সে প্রথম শ্রেণীতে এ প্লাস না পাওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিনের কাছে জানতে সকালে স্কুলে যায় আয়াত উল্লাহ। একই সময় পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভর্তি ও মাসিক কেন বাড়িয়েছে? তা জিজ্ঞেস করে। এ নিয়ে মাস্টার বোরহান উদ্দিনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।
এ সময়ে পার্শ্ববর্তী খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হককে ডাক দেয় বোরহান। শুরু হয় ত্রি-মুখি তর্ক বিতর্ক। ঘটনাটি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। এ সময় আয়াত উল্লাহ ছিল সম্পূর্ণ একা।

মাস্টার জহিরুল হক তাকে ‘কেন এসব জানতে চাচ্ছ?’ প্রশ্ন করে ধাক্কা দেয়। বোরহান উদ্দিনও মারে আরেক ধাক্কা। মাটিতে পড়ে যায় অসহায় অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। এরপর রশি দিয়ে তার হাত ও পা বেঁধে ফেলা হয়। মারধর করতে থাকে দুই শিক্ষকসহ তাদের লেলিয়ে দেয়া বাহিনী। আয়াত উল্লাহকে লাথি ও থুথু মারে শিক্ষক জহিরুল হক ও বোরহান উদ্দিন। ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। এ যেন আরেক নব্য জাহেলিয়াত!

ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ১০/১৫ জনের একদল লোক একই এলাকার আয়াতুল্লাহ নামে এক যুবককে বড় রশি দিয়ে পা থেকে পুরো শরীর বেঁধে কয়েক দফা গণপিটুনি দিয়েছে। এসময় যুবকটি অনেক আকুতি-মিনতি করলেও তা নির্যাতনকারীরা কেউ কানেই তুলেনি। বরং কিছুক্ষণ মেরে দম নিয়ে তারা আবার মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে কয়েকজন হামলাকারীদের কয়েকজনকে ‘মরে যাবে’ বলেও শব্দ করতে শোনা গেছে। এর প্রেক্ষিতে নির্যাতিত যুবককে পানি খাওয়াতেও দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আয়াত উল্লাহকে এমনভাবে মারা হচ্ছে যেন সে একজন বড় সন্ত্রাসী। মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হলেও কোন শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রী তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি। পরে তার শুর চিৎকার শুনে স্কুলের আঙ্গিনায় গিয়ে পৌঁছে পথচারীরা। শিক্ষক-ছাত্রদের পায়ের নীচ থেকে তাকে উদ্ধার করে। শিক্ষক নামধারী ওই নরপশুদের ধিক্কার জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ঘটনার বিষয়ে আয়াত উল্লাহ বলেন, দুই স্কুলে প্রায় সময় অনিয়ম করা হয়। কিছু দিন আগে কোন ধরণের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ করা হয় খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। কেজি স্কুলে নানা অনিয়ম রয়েছে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম করে অনেক শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে।

তিনি বলেন, আমার ছেলের কাঙ্খিত ফলাফল কেন হয়নি? কোন যুক্তিতে ভর্তি ফি ও মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে? জানতে চাওয়ায় আমার উপর নির্যাতন করা হয়েছে। দুই শিক্ষকই এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে। মাস্টার জহিরুল হক, মাস্টার নজিবুল্লাহ, নুরুল হকসহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমার উপর নির্যাতনে সরাসরি জড়িত।

এদিকে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ হলে অনেকে এই নির্যাতনকে আয়ামে জাহেলিয়াত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে সবাই নির্যাতনের কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন।