ইমরুল কায়েস :
সুজন বড়ুয়া নামটি বর্তমান সময়ে ককক্সবাজারের ছাত্রলীগের অনেকের কাছে অজানা। কিছু সংখ্যক নেতা কর্মী সুজন বড়ুয়া নামটি জানলেও, বর্তমান ছাত্রলীগের অনেক নেতা সুজন বড়ুয়াকে চিনেনইনা। কিন্তু কক্সবাজার শহরে ছাত্রলীগকে রক্ষার জন্য, কক্সবাজার শহরে জয়বাংলা স্লোগান ধরে রাখার জন্য যে পরিবারটি সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করেছে সেটি হলো সুজন বড়ুয়ার পরিবার। কক্সবাজারে প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে ২০০২ সালের ৬ জানুয়ারী সুজন বড়ুয়া শিবিরের ক্যাডারদের হাতে নির্মম ভাবে হত্যা হয়েছে। সুজন বড়ুয়া হলো কক্সবাজার ছাত্রলীগের অহংকার।
কক্সবাজার শহরে ছাত্রলীগের শক্ত ঘাটি করার প্রধান সেনাপতি সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা, শহর যুবলীগের যুগ্মআহবায়ক ও সুজন বড়ুয়ার মেঝ ভাই ডালিম বড়ুয়া ৭ বছর অসংখ্য মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করেছেন। যে সুজন বড়ুয়া ও তার পরিবারের এতো অবদান কক্সবাজারের ছাত্রলীগের জন্য, কিন্তু এই সুজন বড়ুয়া কোন মাসের কত তারিখ মারা গেছে সেটিও জানেনই না সাবেক বর্তমান কোন ছাত্রলীগ নেতা। আগামী কাল ছাত্রলীগ নেতা সুজন বড়ুয়ার ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। কক্সবাজার শহরের নিবেদিত এই ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুবার্ষিকী গত ১৬ বছরে একবারো পালন করেনি ছাত্রলীগের কোন নেতা। খবর নেয়নি তার হত্যা মামলার।
সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নুরুল আজিম কনক, সাবেক সভাপতি আলী আহমদ, সাবেক সাধারন সম্পাদক আবু তাহের আজাদ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মোরশেদ হোসেন তানিম, সহ সভাপতি আভাস শর্মা বিশু মতো ছাত্রলীগ নেতারা সুজন বড়ুয়ার মৃত্যুবার্ষিকী কখন তা জানেনা। আর জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সহ সভাপতি ইসমাইল সাজ্জাদ, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন বারেক ও সহ দপ্তর সম্পাদক মইন উদ্দিনতো চিনেনইনা সুজন বড়ুয়াকে। তবে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ইসতিয়াক আহমেদ জয় সুজনের পরিবারের ঘনিষ্ট হওয়ার কারনে তিনি সুজনের মৃত্যু বার্ষিকী জানেন। তবে তিনিও তার উত্তরসূরিদের মতো সুজনের জন্য কিছু করেননি।
ছাত্রলীগের কেউ মনে রাখেনি সুজন বড়ুয়াকে গত ১৬ বছরে একবারও পালন হয়নি সুজন বড়ুয়ার মৃত্যুবার্ষিকী। যেই ছাত্রলীগ করার জন্য সুজন বড়ুয়া নির্মম ভাবে শিবিরের হাতে খুন হলো, সেই ছাত্রলীগের অবহেলা দেখে সুজন বড়ুয়ার আত্মা কি ছাত্রলীগকে কি ক্ষমা করবে?
২০০২ সালের ৬ জানুয়ারী কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলি এলাকায় ক্রিকেট খেলার সময় সুজন বড়ুয়াকে শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডাররা অপহরণ করে খাজা মন্জিল এলাকায় পাহাড়ের উপর তুলে নির্মম ভাবে কুপিয়ে, হাত-পায়ের রগ কেটে, নখ উপড়িয়ে ও গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে শিবিরের ক্যাডাররা পাহাড়ের উপর থেকে সুজন বড়ুয়াকে ফেলে দেয়। কক্সবাজারের ইতিহাসে এই ধরনের নির্মম হত্যাকান্ড আর কখনো হয়নি।
সুজন হত্যার পরদিন তার বড় ভাই রতন বড়ুয়া বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু ঐ সময় বিএনপি – জামায়ত জোট ক্ষমতায় থাকায় উল্টো এলাকা ছাড়তে হয় মামলার বাদি রতন বড়ুয়াকে। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৭ বছর কারাগারে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় ডালিম বড়ুয়াকে।
সুজন হত্যা মামলার এখন আর কোন খবর নেই। আদালতে ঐ মামলার নথিও পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সুজন বড়ুয়ার ভাই কক্সবাজার শহর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ডালিম বড়ুয়া।
ডালিম বড়ুয়া আক্ষেপ করে বলেন, কক্সবাজার শহর জামায়াত-শিবির মুক্ত করতে, ছাত্রলীগকে রক্ষা করতে গিয়ে আমার ভাই জীবন দিলো। কিন্তু গত ১৫ বছরে একবারের জন্যও আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে ছাত্রলীগকে কখনো দেখিনি। গত ১৫ বছরে একটিবার কেউ মামলার বা বিচারের খবর নেয়নি। সব দায় শুধু আমাদের পরিবারের। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি তাই আমার পরিবার আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে। যতোদিন বেঁচে আছি আমরা বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের জন্য লড়াই করে যাবো।
সুজন ও ডালিম বড়ুয়ার পরিবারের এক মাত্র শান্তনার জায়গা হলো প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সুজন বড়ুয়াকে মনে রেখেছেন। তিনি যতোবার কক্সবাজারের জনসভা করেছেন সব সময় সুজন বড়ুয়াকে স্মরন করেছেন, তার মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।