মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, নাইক্ষ্যংছড়িঃ
একমাত্র সহায় সম্বল হিসেবে ব্যবহারের স্বর্ণলংকার ও কিছু গবাদি পশু আনতে পেরেছিলেন বান্দরবান সীমান্তের অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। নিজ দেশে পরিবেশ পরিস্থিতি উন্নতি হলে গবাদি পশু নিয়ে পুনরায় চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন ছিল তাদের।
কিন্তু বিধি বাম, আর্ন্তজাতিক সীমা রেখায় এসেও গবাদি পশুগুলো রক্ষা করতে পারেনি নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। অর্থের লোভ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের গরুগুলো নিয়ে গেছেন ৪২ সদস্যের চিহ্নিত দালাল চক্র। বর্তমানে গবাদি পশুর পাওনা ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার জন্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বড়ছনখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুই পাড়ের গ্রাম সমূহে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেকের মধ্যে পূর্ব পরিচয় এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। ২৫ অক্টোবর নিজ ভূমি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ অংশের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নিলে পরিচিতজনরা সহানুভূতি ও সহযোগিতার নামে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে স্বর্ণলংকার ও গবাদি পশু কৌশলে হাতিয়ে নেয়।
এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক হামিদ হোছন ও আবুল হাশেম এর সাথে। তারা জানান- মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় দুই জন ২৬টি গরু এনেছিলেন। পরে আশারতলী গ্রামের জনৈক আলী হোসেন ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের জসিম মেম্বার ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে মাত্র ৫০ হাজার দিয়ে গরুগুলো নিয়ে গেছেন। বাকী ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকার জন্য ওই দুই ব্যক্তিকে খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। এই সিন্ডিকেট একইভাবে রোহিঙ্গা নাগরিক ছৈয়দ আমিনের কাছ থেকে ৫টি গরু ৭৩ হাজার টাকা দর করে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা নাগরিক হোছন এর দুটি গরু ৪৫ হাজার টাকায় কচ্ছপিয়া ডাক্তারকাটা গ্রামের আফসার আলম নিয়ে গেছেন। গত দুই মাস অতিবাহিত হলেও ওই ব্যক্তিকে খুজে পাচ্ছেন না তিনি। এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন এই রোহিঙ্গা নাগরিক।
এছাড়াও ফুলতলীর শাহজাহান, কচ্ছপিয়ার তৈয়ব, মকবুল আহমদ, আমির হামজা, নুরুল ইসলাম, আনার আলীসহ সহ অন্তত ৪২জন দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের মোট ২২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে গরু আনার অভিযোগে এসব ব্যক্তিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রোহিঙ্গা নাগরিক ছৈয়দ আমিন, আবদুল জলিল, জয়নাল উদ্দিন, মৌ আবুল হোছন, ছৈয়দুল আমিন, শাহজাহান, মাওলানা আমান উল্লাহ জানান- রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে যারা গরু নিয়ে গেছেন তারা পূর্ব পরিচিত আবার কেউ আত্মীয়। দুঃসময়ে বিশ্বাস করে তাদের গরু ও স্বর্ণালংকার দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতারণা করেছেন তারা।
এ বিষয়ে বড়ছন খোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার ফরিদুল আলম জানান- ‘রোহিঙ্গাদের নির্বাচিত মাঝি (দল নেতা)রা ৪২জনের একটি তালিকা করেছেন। তবে সেই তালিকাটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া হয়েছে কিনা তা জানা নেই’।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি ৩১ বিজিবি জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল আনোয়ারুল আযীম তার বক্তব্যে বলেছেন- চিহ্নিত ব্যক্তিরা বিজিবির চোখে অপরাধী। পাশাপাশি তাদের মুখোষ উম্মোচন করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।