মো. নুরুল করিম আরমান, লামা:
চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার কেওছিয়া গ্রামের বাসিন্দা উপেন্দ্র লাল দাশ ও যশদা বালা দাশ’র ছেলে সুশীল চন্দ্র দাস। ১৯৫৫ সালের ১০ আগস্ট জন্ম এ মুক্তিযোদ্ধার। ১৯৭১ সালে সাত কোটি বাঙ্গালীর স্বাধীন আশ্রয় লাভের বুকভরা আশা নিয়ে রণাঙ্গনে জীবনবাজি রেখেছিলেন যে যোদ্ধা, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস; স্বাধীন অবয়বে তিনি আজ নিজেই আশ্রয়হীন। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও গেজেটে ঠাঁই মিলেনি তার। সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে অর্ধহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন। নিজস্ব ভিটেমাটি না থাকায় বাস করছেন একমাত্র মেয়ে জামাতার আশ্রয়ে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি হায়দারনাশী গ্রামে। তৎকালীন ‘হয়তোবা ইতিহাসে তোমাদের নাম লিখা রবেনা’ ইতিহাসে এসব বীর যোদ্ধাদের নাম লিখা না থাকলেও এখনো ১৭ কোটি বাঙ্গালী তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে। ইতিহাসে নাম না লেখা অসংখ্য সুনীল চন্দ্র দাসদেরকে মনে রাখবে কাল পরম্পরায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রজম্মের পর প্রজম্মরা।
১৯৭১ সালে এই বীর যোদ্ধা সুশীল চন্দ্র দাশ নিজ জম্মস্থান দক্ষিণ চট্টগ্রামের রণাঙ্গনে যুদ্ধরত ছিলেন। দেশ রক্ষা বিভাগ কর্তৃক ইস্যুকৃত ক্রমিক নং- ১৯৭১৬৩, (ভারতীয় তালিকা নং- এফ এফ ১৭৪) “বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গনী ওসমানী ও ১ নং সেক্টর আঞ্চলিক অধিনায়ক রফিকুল ইসলাম” এর যৌথ স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রটি শুধু স্মৃতি স্বাক্ষর হিসেব রয়েছে এই বীর সেনানির কাছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গ্রেজেট অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি ৭১’র রণাঙ্গনের সৈনিক সুশীল চন্দ্র দাশ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতার ডাক দিলে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক স্বপন চৌধুরীর সাথে মুক্তি বাহিনী হিসেবে রণ প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান তিনি। সেখানে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বদেশে ফিরে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এ সময় ১নং সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সহযোদ্ধাদের সাথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মরণপন সংগ্রাম করে। মুক্তিযোদ্ধা ডাটা বেইজ ফরম পূরন করে ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্রেজেট-এ নাম অন্তর্ভুক্তি করার জন্য আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা সুশীল চন্দ্র দাশ। আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গোল সীলমোহর দিয়ে রিসিভ করেন কর্তৃপক্ষ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল চন্দ্র দাশ আক্ষেপ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে ঠাঁই পাওয়া দূরে থাক; স্বাধীনতার ৪৬ বছরে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। শেষ জীবনে হলেও গেজেটে ঠাঁই পেলে মরেও শান্তি পাব। এক সময় গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি করাতে তার সহযোদ্ধা মো: আইয়ুব আলীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ততবির করেছি। কোন সুরাহা হয়নি। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করার মত কেউ নেই। তাই গেজেটে নাম অন্তর্ভুক্তি করতে সংবাদপত্রের মাধ্যমে জাতির জনক কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যপারে লামা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বাছাই বা নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল চন্দ্র দাস নিজ উপজেলায় যোগাযোগ করে সহযোদ্ধাদের সহযোগিতা নিলে গ্রেজেটে অন্তর্ভুক্তি হতে পারবেন।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু জানান, গেজেটে ঠাঁই পায়নি এমন মুক্তিযোদ্ধার তথ্য আসলে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ আকর্ষণ করবো।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।