ইমাম খাইর, সিবিএন:
ছিনতাইকারীসহ সব ধরণের অপরাধী ধরতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ। অভিযানের পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে ছিনতাইকারীরা। গ্রেফতার এড়াতে অন্যান্য অপরাধীরাও আত্নগোপনে চলে গেছে। বিশেষ করে শহরের পেশকারপাড়া, কলাতলী বাইপাস, ডায়াবেটিক পয়েন্টে গত তিন দিনের অভিযানে ৩০ ছিনতাইকারীসহ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে অপরাধীচক্রের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ইতিমধ্যে শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে আত্নীয় স্বজনের বাসাবাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। তিন দিনের অভিযানে ২০টি ছুরি, ১৮টি মুখোশ ও ১৬টি লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সব আসামীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ ওঠেছে, চিহ্নিত কিছু দুস্কৃতি-ছিনতাইকারী সাধুবেশে চলাফেরা করছে। শহরের অলিগলি তাদের বিচরণ লক্ষ্যণীয়। চিহ্নিত অপরাধীরা নিজেকে ‘ভাল মানুষ’ পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছে। সুযোগ বুঝে তারাও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এসব মুখোশধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী স্থানীয়দের।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কস্থ কাটাপাহাড়, পাহাড়তলী, ঘোনাপাড়া, বৈদ্যঘোনা, খাজা মঞ্জিল, ইসলামপুর, পেশকারপাড়ায় চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের বসবাস। সেখানে অন্যান্য অপরাধীদের আস্তানাও রয়েছে বলে স্থানীয়রা পুলিশকে অভিযোগ করেছে। অভিযোগের সুত্র ধরে গত তিন দিন ধরে সাঁড়াশী অভিযান চালানো হয়। এ সময় ৩০ ছিনতাইকারীসহ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ছিনতাইসহ সব ধরণের অপরাধ দমনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া। এ সময় তিনি পর্যটন নগরীকে ছিনতাইকারীমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানা সুত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলীস্থ হাইওয়ে রেস্ট হাউজ সংলগ্ন দক্ষিন পশ্চিমাংশে চন্দ্রিমা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর রাতে ৯ জন পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় গ্রেফতার তাদের কাছ থেকে ছয়টি ছুরি, পাঁচটি মুখোশ ও সাতটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- শহরের পেশকার পাড়ার আবদুল করিম এর ছেলে খালেকুজ্জামান ওরফে ছাহিল ওরফে ছানি (২০), মধ্যম বাহারছড়ার মৃত মোঃ হানিফ এর ছেলে নিহাত ওরফে নেহাত (২০), লাইট হাউজ পাড়ার শুক্কুর মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল (২২), বাহারছড়া এলাকার কেরামত আলীর ছেলে মহিউদ্দিন ওরফে বাপ্পা (২০), পেকুয়া থানার উলিদিয়া সবুজ বাজার এলাকার আবুল কাশেম প্রকাশ কসাই কাশেম এর ছেলে আকাশ (২০), বাদশা ঘোনার এলাকার নুর আলীর ছেলে আলী আকবর (২০), সৈকত পোস্ট অফিস এলাকার আবদুছ সবুর এর ছেলে মিশাল ওরফে আবিদ (২০), ঝাউতলা গাড়ীর মাঠ এলাকার মৃত সেলিম এর ছেলে শাখাওয়াত হোসেন ওরফে হৃদয়(২০) এবং মৃত জামাল এর ছেলে শফিউল ইসলাম ওরফে শফি (১৯)।
এর আগে বুধবার ও মঙ্গলবার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কস্থ কাটাপাহাড় ও ঝাউবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় ১৪টি ছোরা, ১৩টি মুখোশ ও ৯টি লোহার রড উদ্ধার হয়।
বুধবার গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শহরের টেকপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আঙ্গুর (৩৩), নতুন বাহারছড়ার মৃত জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. হানিফ (৩৮), ঝিলংজা মুহুরী পাড়ার মৃত আমান উল্লাাহর ছেলে তারেক হাসান (২৮), পশ্চিম বাহারছড়ার মো. আলীর ছেলে মো. হামিদ (৩০), মহেশখালী চরপাড়া এলাকার মৃত ইসহাকের ছেলে মো. মোস্তাক (৪০), মধ্যম টেকপাড়ার মো. হানিফের ছেলে শামীম হায়দার রুবেল (২২), মোহাজের পাড়ার মো. ইউসুফের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে কাউয়া বাবু (১৯), পৌরসভার কালুর দোকান এলাকার শুবধন বড়ুয়ার ছেলে বিধান বড়ুয়া (২৬), পূর্ব পাহাড়তলী এলাকার মো. ইউনুছের ছেলে রিয়াদুল ইসলাম (১৮) এবং আক্তারুজ্জামানের ছেলে মো. ইমরান (১৮)।
মঙ্গলবার রাতে আটকরা হলেন- ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম লারপাড়ার মীর কাশেমের ছেলে মো. রুবেল (২০), পশ্চিম গোমাতলীর মৃত শহর মুল্লুকের ছেলে মো. কাছিম (৩৫), বাদশার ঘোনার আইয়ুব আলীর ছেলে মো. শাহিন (২০), বৈল্যাপাড়ার মৃত আবু বক্করের ছেলে আবু তাহের (২৮), নুর পাড়া এন্ডারসন রোড এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে রাফসান হোসেন মিন্টু (৩১), মোহাজের পাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে তুষার আহম্মদ মাওন (২৩) এবং আব্দুল কাদেরের ছেলে ফজলে করিম (২৭), দক্ষিণ বাহারছড়ার মৃত ফরিদের ছেলে নুরুল আবছার (২০), ঝিলংজা পশ্চিম গোমাতলীর নুরুল আজিম ওরফে হাসান আলীর ছেলে মোবারক আলী (২০), দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া বাচা মিয়ার ঘোনার নুরুল আলমের ছেলে রায়হান (২০) এবং মৃত আলী আকবরের ছেলে আলাউদ্দিন (২০)।
এছাড়া কুখ্যাত মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের সদস্য নবাব শরীফ ও বাদশাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পৃথক অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত নুরুল আমীন খুরুশকুল মেহেদী পাড়া থেকে ধরা পড়ে। অপর অভিযানে গ্রেফতার করা হয় বাহারছড়ার খায়রুল আমিনের ছেলে মো. ফয়সাল (৩০), ঝিলংজা পূর্ব খরুলিয়ার মৃত বশির আহমেদের ছেলে নাজির উদ্দিন (৩৫), দক্ষিণ বাহারছড়ার মো. আলীর ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২৯)।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।