ডেস্ক নিউজ:
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা হচ্ছে। প্রথম তালিকায় এক লাখ রোহিঙ্গার তথ্য সরবরাহের পরিকল্পনা করছে সরকার। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে।
সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের একটি তালিকা (ডাটাবেস) করা হয়েছে, যেখানে সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গার তথ্য আছে। প্রথম ধাপে আমরা এক লাখ রোহিঙ্গার তালিকা সরবরাহ করব এবং তাদের যাচাই বাছাই সাপেক্ষে ফেরত পাঠানোর পর পরবর্তী তালিকা সরবরাহ করা হবে।
গত ২৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পরে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, শুধুমাত্র তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে। এ প্রত্যাবাসন হবে ধাপে ধাপে।
ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গেলে যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে, সেগুলো এখানে উল্লেখ থাকবে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কোন সীমান্ত দিয়ে ফেরত যাবে, যাওয়ার আগে বাংলাদেশের কোন অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করবে, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পরে কোথায় অবস্থান করবে ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় এখানে উল্লেখ থাকবে।
আগামী বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে রোহিঙ্গাবিষয়ক ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের (এনটিএফ) ১৭তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত আগের এনটিএফ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেহেতু দ্বিপক্ষীয়ভাবে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছি, সেই কারণে এই চুক্তির আলোকে আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। চুক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এবং তার টার্মস অব রেফারেন্স ঠিক করা হয়েছে। আমরা যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকের আগে নিজেদের কৌশল ঠিক করার জন্য বৃহস্পতিবার সবার সঙ্গে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওপর চাপ
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই চাপে আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ চাপে আছে কারণ, রোহিঙ্গারা আমাদের নিরাপত্তা, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে বড় ধরনের ঝুঁকি। এছাড়া, ২০১৮ সাল হচ্ছে নির্বাচনের বছর এবং সে কারণে সরকারের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব এই প্রক্রিয়া শুরু করে যত বেশি সম্ভব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো।
মিয়ানমারও আন্তর্জাতিক চাপে আছে। সে কারণে তারা এই প্রক্রিয়াটি শুরু করে দিয়ে সবাইকে দেখাতে চায় তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক। তাছাড়া, পরে সময়ক্ষেপণ করা হলেও তাদের ওপর এখনকার মতো চাপ থাকবে না।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গারা ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের দাবা খেলা বটে, কিন্তু এরমধ্যে থেকেও বাংলাদেশ চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাদের যতটুকু সম্ভব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
গত ২৫ আগস্ট পুলিশ চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাত তুলে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয় এবং এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তার আগে গত বছরের অক্টোবরে সেনা অভিযানের কারণে পালিয়ে আসে ৮৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এখানে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে আরও তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।