বাংলা ট্রিবিউন:
নতুন বছরের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে সারা দেশে বেরিয়ে পড়েছে বিএনপির ৭০টি উচ্চ পর্যায়ের টিম। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে এই টিম কাজ করবে। এর মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে খালেদা জিয়ার নির্দেশনা যেমন পৌঁছে দেওয়া হবে, তেমনি তৃণমূল থেকেও নেওয়া হবে আগামী বছরের রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের পরামর্শ। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির এই ৭০টি টিমের উদ্দেশ্য স্থানীয়ভাবে কর্মিসভা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া। একইসঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে নতুন বছরে দলের রাজনৈতিক কৌশল কী হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে।
বরিশাল অঞ্চলে যাচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিলেট অঞ্চলে যাচ্ছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ যাচ্ছেন গোপালগঞ্জ, আবদু্ল্লাহ আল নোমান যাচ্ছেন ময়মনসিংহ উত্তর, দক্ষিণ ও শেরপুর এবং রুহুল আমীন চৌধুরী যাচ্ছেন নেত্রকোনা অঞ্চলে। এছাড়া মঙ্গলবারই শরীয়তপুর-মাদারীপুর ঘুরে এসেছেন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান।
দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ২৮ ডিসেম্বর সিলেটে ও পরদিন সুনামগঞ্জে কর্মিসভা ও মতবিনিময় সভা করবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এরপর ৩০ ডিসেম্বর সিলেট মহানগরের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান অবশ্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘সারা দেশে বিএনপির ৭০টি টিম পাঠানোর ঘটনায় বিশেষ কোনও তাৎপর্য নেই।’ এই সফরকে দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ বলে দাবি করেন এই নেতা।
অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘গত একবছরে ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে যে সংগঠন গোছানো হয়েছে, এর অগ্রগতি ও তৎপরতা দেখভাল করতেই সারা দেশে টিম যাচ্ছে। নতুন কমিটি হয়েছে, সাংগঠনিক পরিস্থিতি কেমন, এসব বিষয় দেখভাল করার জন্যই ৭০টি টিম।’
আহমেদ আযম খান কথার শেষে যোগ করেন, ‘নতুন বছরে আন্দোলন ও নির্বাচন—দুটোই আছে। এই প্রস্তুতিও নিতে হবে। এই বিষয়টিও জানানো হয়েছে।’
শিগগিরই একটি এলাকায় যাবেন, এমন একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূলত তৃণমূল-পর্যায় থেকে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে যা বের হবে, সেটাকে আমলে নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।’
ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়া রবিবার মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বলেছেন, ‘আগামী বছর আন্দোলন, সংগ্রাম ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বছর। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবেই গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হবে।’
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার দাবি, ‘খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বিএনপির নতুন বছরের কৌশল সম্পর্কে পরিষ্কার করেছেন।’
প্রভাবশালী এই নেতা জানান, ‘বিএনপি আন্দোলন করবে, আলোচনা করবে, রাজপথেও থাকবে। বিএনপি অনেক আগে থেকেই সরকারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে এসেছে, কিন্তু তারা গা লাগায়নি। ফলে আগামী বছর নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশল নির্ধারণ তো স্বাভাবিক পদ্ধতি।’
বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার সমঝোতার মধ্যে না এলে দেশে আবার অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আর এর দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। ইতোমধ্যে সারা দেশে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনমনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিও স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এসব বিষয় বুঝিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করাসহ কেন্দ্র থেকে খালেদা জিয়ার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই বিশেষ ৭০টি টিম বেরিয়েছে সারা দেশে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সফরের উদ্দেশ্য কর্মিসভা করা। এটা দলের নিয়মিত কার্যক্রম। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা, আলোচনা করা। ভবিষ্যৎ কর্মসূচি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভাবনা বিনিময় করা।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।