এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটের অদুরে চাবাগান খ্রিস্টান পল্লীতে প্রতিবছরের মতো এবার উৎসবের আমেজে বড়দিন উদযাপন করেছে খ্রিস্টার সম্প্রদায়ের নানা বয়সের হাজরো নারী-পুরুষ ও আবাল বৃদ্ধ-বণিতা। বড়দিন উপলক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগের দিন ২৪ ডিসেম্বর থেকে খ্রিষ্টান পল্লী ও তাদের ধর্মীয় উপশনালয়ে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে এবছরও কোন ধরণের উদ্বেগ-আতঙ্ক ছাড়াই উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন।
গতকাল সোমবার সকালে চাবাগানস্থ খ্রিষ্টান পল্লীর গীর্জায় আয়োজন করা হয় অনিন্দ্য উৎসবের। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উৎসব আয়োজনে আনন্দ ভাগা-ভাগি করে নিতে সেখানে উপস্থিত হন কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। পরে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বড়দিনের কেক কাটেন জেলা পুলিশ সুপার ড.ইকবাল হোসেন এবং চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আজাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোক্তার আহমদ চৌধুরী, মালুমঘাট খ্রিস্টান হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা জোসেফ অমুল্য রায়, উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ তালুকদার, ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নুরুল আমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মো.শওকত আলী, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজি জামাল হোছাইন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল এহেছান চৌধুরী সাইফুল।
বড়দিনের উৎসব অনুষ্ঠানটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একক হলেও একসময় হয়ে উঠে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের। বেলা বাড়ার সাথে সাথে খ্রিস্টান পল্লীতে বাড়তে থাকে প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতি।
মালুমঘাট খ্রিস্টান হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা জোসেফ অমুল্য রায় বলেন, বড়দিন উপলক্ষে আগের দিন থেকে খ্রিস্টান পল্লী গুলোকে উৎসবের আমেজে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। বিশেষ করে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট চা-বাগান এলাকার খ্রীষ্টান পল্লীতে দিবসটিকে ঘিরে নানা বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোরদের মনে রঙ লেগেছে। আগেরদিন থেকে বড়দিন উদযাপনে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে উৎসব শুরু হয়। প্রত্যেক বাড়িতে বিরাজ করছে উৎসবের বর্ণিল আয়োজন। পাশপাশি সাজানো হয় পল্লীর র্গীজা। সাজানো হয় যিশু খ্রীষ্টের জন্মস্থান সুদৃশ্য বেথলেহেম গোয়ালঘর।
তিনি বলেন, গতকাল ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের সকালে খ্রীষ্টান পল্লীর গীর্জায় আনুষ্টানিকভাবে প্রার্থনা উদ্বোধন হয়। তারপর পুজারীরা অংশ নেয় বিশেষ প্রার্থনা পর্বে। নিবিঘœভাবে যাতে পুজারীরা উৎসব পালন করতে পারে সেইজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
খ্রিস্ট ধর্মের বাইবেল মতে, ২০১৫বছর আগে ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমের গোয়ালঘরে যিশু খ্রিষ্টের জন্ম। জন্মের দিনটিকে বড়দিন হিসেবে উপলক্ষ করে বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে প্রতিবছর। একই ভাবে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট চা-বাগান খ্রীষ্টান পল্লীতে বসবাসরত স্থানীয় খ্রীষ্টান ধর্মের অনুসারীরা প্রতিবছর দিবসটি নানা অনুষ্টানের মাধ্যমে পালন করে।
যিশুখ্রিষ্ট এদিন জগতে আসার মধ্য দিয়ে ২৫ ডিসেম্বরকে মহৎ করেছেন বা ‘বড়’ করেছেন। ‘বড়দিন’ তাই বিশ্বাস-ভালোবাসা ও ক্ষমার চেতনায় ‘বড়’ হওয়ার দিন বলে মনে করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে মালুমঘাট খ্রীষ্টান পল্লীর সর্বস্থরের মানুষ ভাবগর্ম্বীর চেতনায় পালন করে। প্রতিবারের মতো এবছরও পুজারীরা সাধ্য মতো অনুষ্টানের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বড়দিনের উৎসব উদযাপনে যাতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের কোন ধরণের ছন্দপতন না ঘটে সেইজন্য আগেরদিন থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খ্রিস্টান পল্লীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ফলে কোন ধরণের শঙ্কা ছাড়াই প্রতিবছরের মতো এবছরও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি সকল ধর্মের মানুষ উৎসবের আমেজে বড়দিনের অনিন্দ্য আয়োজনটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। #
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।