বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার :
চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার লেবার-সুপারেরা (পরিচ্ছন্নতাকর্মী)। যারা প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত পর্যটন শহরের বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে শহরবাসীকে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয় সেসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই বললেই চলে। তাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় নেই কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা। অথচ প্রতিদিনই শহরের নালা-নর্দমা, ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব লেবার-সুইপারেরা। অনেক সময় মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকেও বরণ করতে হয় অনেক লেবার-সুইপারদের। কক্সবাজার পৌরসভার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শাখা সূত্রে জানা গেছে-কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে সুইপার-লেবার মিলে মোট ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। এদের মধ্যে লেবার ১৬৫ জন (যারা সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করে) আর সুইপার (ঝাড়–দার) রয়েছে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ১৩৫ জন। যারা ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন অলি-গলির সড়কে ঝাড়– দিয়ে ময়লা পরিস্কার করে। এসব লেবার-সুইপারদের ঈদ, কোরবান, পূজোর বোনাস ছাড়া বেতন দেয়া হয় সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই সামান্য বেতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে লেবার-সুইপারদের বাড়ি ভাড়া দেয়া, ছেলে-মেয়ের স্কুলের বেতনসহ মাসিক যাবতীয় খরচাদি। অথচ শহরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে গিয়ে এসব লেবার-সুইপারেরা আক্রান্ত হয় অনেক জটিল রোগে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, যহ্মœা, টাইফয়েপ, সর্দিজ্বর, ধনুস্কঢংকার ও এইডস্সহ নানা জটিল রোগ বাসা বাঁধে এসব লেবার-সুইপারদের শরীরে। এতকিছুর পরও ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করার জন্য আলাদা কোন পোশাক, গ্লাপস কিংবা জুতো দেয়া হয়নি পৌরসভার পক্ষ থেকে। অরুন রুদ্র, আক্তার হোসেন, যোগেশ দাশ, সন্তোশ দাশসহ কক্সবাজার পৌরসভার একাধিক লেবার-সুইপার জানান, প্রতিনিয়তই তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে বাসায় ফিরে শরীরে কোন না কোন সমস্যা দেখা দেয়। এদের মধ্যে লেবার অরুন রুদ্র জানান-গত মাস দুয়েক আগে ডাস্টবিন থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে গিয়ে তাকে কুকুরে কামড়িয়ে মারাত্মক আহত করে। নানা রোগ-বালাইয়ের পাশাপাশি লেবার-সুইপারদের মোকাবেলা করতে হয় কুকুরদেরও। ইতোমধ্যে একাধিক লেবার-সুইপার কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন শাখার পরিদর্শক কবির হোছাইন। তিনি জানান-কুকুরের আক্রমনের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে গিয়ে ইনজেকশেনের সুঁই, ধারালো জিনিসের উপর পা-কিংবা হাত পড়ে আহত হয় লেবার-সুইপারেরা। কবির হোছাইন আরো জানান-গত বছর খানেক আগে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে গিয়ে এইডস্ রোগে আক্রান্ত হয়ে রানা নামের তাদের এক লেবারের মৃত্যু হয়েছে। লেবার-সুইপারেরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে স্বীকার করলেও তাদের জন্য আলাদা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি। তবে পৌরসভার এই পরিদর্শক জানান-যদি কোন লেবার-সুইপার কাজ করতে গিয়ে রোগ-বালাইয়ের স্বীকার হয় তাহলে সে ডাক্তার দেখিয়ে যদি প্রেসক্রিপশন পৌরসভার প্রদান করে থাকলে তাকে ৫‘শ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। যারা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের অলি-গলির ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করে কক্সবাজার শহরকে স্বাস্থ্যকর নগরীতে রূপ দেয়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে সেসব লেবার-সুইপারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী সচেতন মহলের। এসব বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করার পরও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্যে নেয়া সম্ভব হয়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।