বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার :
ঋতুর পালাক্রমে বিদায় নিয়েছে হেমন্ত। দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। কখনো বেশী, কখনো মাঝারি আবার কখনো হালকা কুয়াশার ছাদরে ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতির এমন অবস্থায় কক্সবাজার জেলার উপকলীয় এলাকায় আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। নানা জাতের অতিথি পাখির কলকাকলিতে ইতোমধ্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার উপকূল। এসব পাখি কখনো নীল-সাদা আকাশে পাখা মেলে উড়ে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে আবার কখনো বঙ্গোপসাগর কিংবা নদীর জলে ডুব দিয়ে খেলা করছে আর মাছ শিকার করছে। অতিথি পাখিদের এমন খুনসুঁটি আর ছোটাছুটি সকার মনকে যেন করে তুলেছে মোহনীয়। বিশেষ করে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, সমুদ্র সৈকতের দরিয়া নগর, নাজিরারটেক, ইনানী সমুদ্র সৈকত, টেকনাফের নাফনদী আর কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন উপকূল মোহনায় নানা জাতের অতিথি পাখির উপস্থিতির বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব এলাকায় উপকূলজুড়ে বিভিন্ন প্রান্তে দলে দলে বাসা বাঁধছে নানা দেশের অতিথি পাখি। শীতের এই তীব্রতার মাঝে অর্থ্যাৎ কার্ত্তিক মাসের পর থেকে সীমান্ত পথ পাড়ি দিয়ে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, সাইবেরিয়া, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও মিয়ানমারের হাজার হাজার পথ পাড়ি দিয়ে অতিথি পাখির দল কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিন হাজির হচ্ছে বলে জানা গেছে। সদ্য সেন্টমার্টিনদ্বীপ ভ্রমণ শেষে ফেরা শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার রাজিব, রকি, শহিদুল ইসলামসহ একাধিক যুবক জানান-বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির বেশীর ভাগই এখন বাসা বেঁধেছে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকার উপকূলীয় প্যারাবন এবং গ্রাম অঞ্চলের গাছ গাছালিতে। শীতের অনুভূতিতে সেন্টমার্টিনের সাগরকে ছিন ছিন মধুর শব্দে বিভোর করে তুলেছে এই অতিথি পাখির দল। ঝাঁকে ঝাকে এই পাখি দূরদেশ থেকে এসে সেন্টমার্টিনের দ্বীপের হোটেলের কটেজের ছাদে, গাছের ডালে, পর্যটকবাহী জাহাজের ছাদে ও সাগরের বিভিন্ন খুঁটিতে বসে আপন মনে গান গাইছে। এদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো সেন্টমার্টিনদ্বীপ। টেকনাফের শামলাপুর বাজারের দীর্ঘদিন দিনের ব্যবসায়ী অমর দাশ জানান-প্রায় ১২/১৪ বছর ধরে এই অতিথি পাখি দূর দেশ থেকে আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বাতাসে শীতের বার্তা শুরুর পর পাখির আগমন ঘটে থাকে। সেন্টমার্টিনের একাধিক বাসিন্দা ও জেলেদের উদ্ধৃতি দিয়ে রবিবার রাতে সেন্টমার্র্টিন শেষে কক্সবাজার ফিরে আসা ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার রফিকুল আলম ও সাদিয়া জান্নাত নামের এক নব দম্পতি জানান-বছর দশেক আগে থেকে এখানে দেশী-বিদেশী পাখিদের আনাগোনা চোখে পড়ে। শীতের শুরুতেই এই পাখিগুলো খাবারের জন্য ছুটে আসে সেন্টমার্টিনদ্বীপ ও সাগরে। এই সাগরের পানির উপর অংশে পড়ে যাওয়া, পোকা, ছোট মাছ শিকার করে খেতে দেখা যায়। এছাড়া দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা পোকা, মাছ ইত্যাদি খাবারের জন্য ছুটে আসে দূর দেশ থেকে। শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এদের সংখ্যাও যেন বাড়তে থাকে। শীত শেষ, পাখিরাও ফিরে যায় আপন নীড়ে। শুধু সেন্টমার্টিনদ্বীপ নয়-কক্সবাজারের খুরুস্কুল, ভারুয়াখালী, ইনানী, হিমছড়ি, চৌফলদন্ডী, পোকখালী, ছিরাদিয়া, টেকনাফের সৈকত পাড়, নাজিরারটেক, সোনাদিয়াসহ বেশ কিছু এলাকা অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত। বক, চখা-চখি, ঘুঘু, চেঘা, গাংচিল, শঙ্খচিল, পেলিক্যান, ডাভ, ভাদিহাস ও বালিহাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে দর্শনার্থীরা প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন অতিথি পাখি অধ্যুষিত এলাকায়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।