শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে :
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় অনেকেই তা মানছেন না। উপজেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতেও থামানো যাচ্ছে না ওই এলাকায় পাহাড় কাটা। উল্টো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে বেড়েই চলেছে একের পর এক পাহাড় কাটার ঘটনা। আর এদিকে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় কাটা খবরের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ডাম্পার গাড়ী জব্দ করা হয় ।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের তিতার পাড়া এলাকা থেকে মাটি ভর্তি দুইটি ডাম্পার গাড়ী জব্দ করা হয়। এ সময় চালক সহ অন্যান্যরা পালিয়ে যাওযায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
পাহাড় কাটা অভিযান চালিয়ে ঘটনা স্থল থেকে ২টি ডাম্পার গাড়ী জব্দ করার কথা নিশ্চিত করেন বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আবু মুসা।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ৪/৫টি ডাম্পার গাড়ী স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মঞ্জুর আলমের নেতৃত্বে নিয়মিত তিতারপাড়াস্থ ৫০ ফুট উঁচু একটি পাহাড় কর্তন করে ফসলী জমি ভরাট সহ বিভিন্ন স্থানে মাটি পাচার করেই যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত পাহাড় কর্তনের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকায় স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে মৌখিক অভিযোগ করা হলে প্রশাসন তাৎক্ষণিক পুলিশকে অভিযানের নির্দেশ প্রদান করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইটি মাটি ভর্তি ডাম্পার গাড়ী আটকাতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ তে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটা অথবা মোচনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র অবশ্যই নিতে হবে। ২০০২ সালের ৯ মার্চ পরিবেশ অধিদফতর এই সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বলা হয়েছে পাহাড় কর্তন ও মোচনের ক্ষেত্রে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা -১৯৫২ এবং ১৯৯৬ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনও সরকারি, আধা-সরকারি, সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তি পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। যদি কেউ এটি অমান্য করে, তবে তাকে অথবা ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ফের একই অপরাধ করলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বছর কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ জরিমানা গুণতে হবে।
প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা এস,এম সরওয়ার কামাল প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যক্তিরা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড় কেটেই চলছে। জরিমানা কিংবা মামলা দায়ের করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। তবে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাহাড় কাটায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২১ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্টের অভিযানে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের বাঘানঘোনা, স্কুলপাড়া, ব্যবসায়ীপাড়া ও বিছামারা গ্রামের পাহাড় কাটা অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটি মোটরসাইকেল, মাটি সরানোর দুটি ভ্যান গাড়ি, তিনটি পাওয়ার পুল হরিজেন লাইট ও পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহিৃত নানা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এসব উঁচু পাহাড় কাটার অপরাধে জড়িত ৬ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশরাফ বাদি হয়ে পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১২এর ৬(খ) ধারায় পাহাড় কাটায় জড়িত নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ব্যবসায়ীপাড়ার মৃত আবদুল গফুরের ছেলে হোসনে মোবারক, ফারুক, ইয়াসির আরাফাত, স্কুলপাড়ার রফিক ছিদ্দিকীর ছেলে মোবারক ছিদ্দিক, বাগানঘোনা গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে ছৈয়দ আলম, বিছামারা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ তৈয়বের ছেলে মোহাম্মদ হাসানের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে পৃথক ৪টি মামলাসহ প্রত্যেক মামলায় ৬ থেকে ৭জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় এসব মামলা দায়ের করেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।