আজিম নিহাদ:
বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝরিয়ে যারা দেশের চাকা সচল করছে তাদের অবদানকে  মূল্যায়ন করে এবারও কক্সবাজারের পাঁচ প্রবাসীকে গত অর্থ বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানোর সম্মাননা জানানো হয়েছে।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসের অনুষ্ঠানে পাঁচ প্রবাসীর স্বজনদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। জেলা প্রশাসন এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বেসরকারি সংস্থা ইপসা।
সম্মাননাপ্রাপ্ত পাঁচজন হলেন আরব আমিরাত প্রবাসী সদর উপজেলার ডিককুল গ্রামের ইব্রাহিম ওসমান আফলাতুন, আরব আমিরাত প্রবাসী শহরের তারাবনিয়ারছড়া খুরুশকুল রোড় এলাকার আবদুল কুদ্দুস, ওমান প্রবাসী রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের নুর আহম্মদ, আরব আমিরাত প্রবাসী শহরের কলাতলী লাইট হাউজ এলাকার মোহাম্মদ ইসমাইল ও ওমান প্রবাসী চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর চিরিঙ্গা এলাকার মাহবুবুল আলম।
এর আগে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবসের শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়ক ঘুরে আবারও সেখানে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সুপার একেএম ইকবাল হোসেন ও অন্যান্যরা অংশ নেন।
পরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট খালেদ মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহিদুর রহমান, কমিউনিটি পুলিশিং কক্সবাজারের সভাপতি অ্যাড. আমজাদ হোসেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর কক্সবাজার উপকার্যালয়ের প্রধান সংযুক্তা সাহানি, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রমিয়ন কান্তি দাশ, বেসরকারি সংস্থা ইপসার সমন্বয়ক ওমর সাদেক ।
সভায় গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানো পাঁচ প্রবাসীর স্বজনদের হাতে সম্মানা ক্রেস্ট, সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া প্রবাসীর ১০৯ জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেওয়া হয়।
জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রমিয়ন কান্তি দাশ বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০১৭ সালে কক্সবাজারের প্রবাসী পরিবার গুলোর ১০৯ জন মেধাবী সন্তানকে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিইসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ৯ হাজার ৯০০ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিবছর এই টাকা পাবে। এছাড়া জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ৪০ জন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ১৪ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। তারাও এই টাকা এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত পাবে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া চারজন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ২১ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। তারা এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিবছর এই টাকা পাবেন। আর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া চারজন শিক্ষার্থীকে জনপ্রতি ২৭ হাজার টাকা করে চেক তুলে দেওয়া হয়। তাঁরা স্নাতক (সম্মান) পর্যন্ত প্রতি বছর এই টাকা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, মাস খানেক আগে ২১ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তির চেক তুলে দেওয়া হয়। তারা বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। মাদ্রাসাতেও ইবতেদায়ী থেকে ফাজিল সমমান ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়েছে।
আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, বিদেশে যাওয়ার আগে একজন শ্রমিকের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন তথ্য জানা থাকা প্রয়োজন। তাতে প্রতারণার ঝুঁকি কমে যায়, আয়ের পথও বাড়ে। দালালের দৌরাত্ম বন্ধ করার জন্য এখন বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। তারপরও কেউ যদি প্রতারণার শিকার হন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জানাবেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।