বিবিসি বাংলা
দু:সাহসিক ইন্টারনেট ভিডিও দিয়ে টাকা কামাতে গিয়ে এক চীনা তরুণ উ ইয়ংনিং ৬২ তলা ভবন থেকে পড়ে মারা যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে – এসব প্ল্যাটফর্ম আর তাদের দর্শকরাও কি এ জন্য দায়ী নয়?
চীনে ইন্টারনেট ভিডিও শিল্পে এখন শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ হচ্ছে, আর লক্ষ লক্ষ লোক ‘জ্যান্ত মাছ খাওয়া’, ‘কাঁচা ডিম গিলে ফেলা’, ‘নগ্ন নৃত্য’ বা ‘আকাশ-ছোঁয়া উঁচু ভবনে ঝুলে থাকা’র মতো দু:সাহসিক কাজের ভিডিও প্রচার করে অর্থ আয় করছে।
এ ভাবেই চীনের চাংশা শহরে এক ৬২ তলা ভবনে উঠেছিল উ ইয়ংনিং – কোন রকম নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ছাড়াই।
সেই ভবনের কোন একটি অংশ ধরে ঝুলে থাকা অবস্থায় ভিডিও করে সেই ভিডিও সে ইন্টারনেটে ছাড়বে – এই ছিল তার পরিকল্পনা। এমন কাজ সে আগেও করেছে।
কিন্তু এবার ঘটলো ভয়াবহ দুর্ঘটনা। উ ইয়ংলিং পড়ে গেল, ৬২ তলা ভবন থেকে সোজা নিচের রাস্তায়। তৎক্ষণাৎ মৃত্যু।
তার মৃত্যুর খবর অবশ্য ইন্টারনেটে ছড়ায় মাত্র কিছুদিন আগে, প্রথম এটা প্রকাশ করে তার বান্ধবী, – আর পরে তা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। তার সেই পতনের কথিত ভিডিওটিও গত সপ্তাহে ইন্টারনেটে বেরিয়েছে।
বেজিংএ একটি সংবাদমাধ্যম অনুসন্ধান করে বের করেছে যে ৫০০টিরও বেশি ছোট ভিডিও এবং ‘লাইভ স্ট্রিম হুওশান নামে একটি ওয়েবসাইটে ছেড়েছিল উ – যা থেকে সে আয় করে সাড়ে পাঁচ লাখ ইউয়ান বা প্রায় ৮৩ হাজার মার্কিন ডলার। হুওশানে তার ‘ফ্যান’ ছিল ১০ লাখ।
এর পর এখন চীনে শুরু হয়েছে আত্মানুসন্ধান। প্রশ্ন উঠছে হুওশানের মতো এসব ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম এবং তাদের দর্শকরাও কি এ মৃত্যুর জন্য কোনভাবে দায়ী নয়?
প্রশ্নটা উঠছে কারণ হুওশানে শ্লোগান হলো, ‘একটি ভিডিও করে আপনি টাকা রোজগার করতে পারেন।’
চীনে এ প্রশ্নটা আরো বেশি করে উঠছে – কারণ যারা এসব ভিডিও বা লাইভস্ট্রিম করেন – তারা সরাসরি ফ্যানদের কাছ থেকে অর্থ আয় করতে পারেন। এসব ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ‘ফলোয়ার’দের ভার্চুয়াল গিফট বা উপহার পাঠাতে দেয় – যা পরে ভাঙিয়ে নগদ টাকায় পরিণত করা যায়।
‘এসব লাইভ স্ট্রিমাররা মৃত্যুর খুব কাঝাকাছি পরিস্থিতির বাস্তব ভিডিও ক্লিপ বানায়। আর এগুলো থেকে প্ল্যাটফর্মগুলো মুনাফা করে’ – বলছে দি পেপার নামে একটি সংবাদ মাধ্যম।
হুওশান অবশ্য বলছে, তারা কখনোই উ-র বিপজ্জনক স্টান্টকে উৎসাহ দেয় নি, তবে যারা এ ধরণের চরম খেলোয়াড়দের উদ্দীপনা এবং তাদের কাজকে সম্মান করে।
উ-র একজন আত্মীয় এমন অভিযোগ করেছিলেন যে হুওশান উ-র এই দু:সাহসিক কাজে আর্থিক সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু হুওশান এখন এর বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
উ-র দর্শকরাও কি তার মৃত্যুর জন্য কিছুটা হলেও দায়ী? এ নিয়েও বিতর্ক চলছে চীনের বিভিন্ন মাধ্যমে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এরকম দু:সাহসিক কাজের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়। রাশিয়াতে এধরণের ভিডি করতে গিয়ে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। কারণ এসব লাইভ স্ট্রিম বা ভিডিও যারা করে তারা তাদের ভক্তদের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ আয় করে।
ওয়েইবো নামেএকটি মাইক্রোব্লগিং সাইটে একজন লিখেছেন, “ব্যাপারটা হলো – যে লোক নিজের গায়ে ছুরি মারতে চায়, তাকে আপনি একটা ছুরি কিনে দেয়াটা যে রকম, এসব বিপজ্জনক ভিডিওকারীদের কাজ দেখা বা এর প্রশংসা করাও একই রকম ব্যাপার।”
“এগুলো দেখবেন না, লাইক দেবেন না, বা ফলো করবেন না – কারো জীবন বাঁচানোর জন্য এতটুকু তো আমরা করতে পারি।”
কিন্তু সমস্যা হলো, চীনের ইন্টারনেট ভিডিও শিল্পে এখন শত শত কোটি ডলার খাটছে। লক্ষ লক্ষ লোক তাদের ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করছে,আর চনের ৭১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এগুলো দেখছে।
এখানে জ্যান্ত গোল্ডফিশ খেয়ে ফেলা থেকে শুরু করে
চীনে যতই সেন্সরশিপ থাকুক – লাইভ স্ট্রিমের এই জগত অনেকটা ওয়াইল্ড ওয়েস্টের মতই অনিয়ন্ত্রিত।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।