জাগো নিউজ:
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরেক টার্ম ক্ষমতায় থাকতে চায়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন, পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের উদ্বোধন, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করে দেশকে উন্নয়নের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে চায় দলটি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা চান আগামী পাঁচ বছর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার এ দেশের শাসন ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকুক। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি চাই আগামী পাঁচ বছর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকুক’। তার ওই ঘোষণা দলের নেতাকর্মীরাও নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছেন। এজন্য দলের নেতাকর্মীরা কাজও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলে। বর্তমান সরকারের আট বছরের শাসনামলে যে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে, সে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে মনোযোগী হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। স্বাধীনতার এ সুবর্ণজয়ন্তী জমকালোভাবে উদযাপন করা হবে। অনেক আগে থেকে এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ক্ষমতায় থেকেই উদযাপন করতে চায় দলটি। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মিলনমেলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে; যা ক্ষমতার বাইরে থাকলে সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই আগামী মেয়াদেও ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে তারা জানান, আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চায়। নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগ আরেক টার্ম ক্ষমতায় থাকলে মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে পারবে, এটা নিশ্চিত। এছাড়া পদ্মা সেতুর উদ্বোধনটাও নিশ্চিত হবে। দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। সেতু নির্মাণের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেয়। পরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় শেখ হাসিনার সরকার। সে অনুযায়ী সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক কাজ শেষও হয়েছে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলা শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করছে সরকার।
এছাড়া রাজধানীর উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের পুরো কাজ শেষ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। এটির উদ্বোধন হলে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।
অন্যদিকে, পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করা হলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা শতভাগ পূরণ হবে। সেই সঙ্গে দেশে পর্যাপ্ত শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। গত ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। দুই ইউনিটের এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে প্রথমটির কাজ ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয়টির নির্মাণকাজ ২০২৪ সালে শেষ করে তা চালুর কথা রয়েছে। এসব প্রকল্প সম্পন্ন হলে ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার কাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মতামত ব্যক্ত করেছেন।
এজন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যত ধরনের কৌশল নেয়া দরকার, সেটা তারা নেবে- এমন মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। এ কারণে সরকারবিরোধী বিএনপি জোটের নির্বাচনকালীন সহায়ক বা অন্য কোনো সরকারের দাবি মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সরকারি দলের নেতারা। এক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও কোনো উদ্যোগ নেবে না সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে। সরকারি দলের মতে, এরই মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায়ে পৌঁছার আশা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের।
এছাড়া এলএনজি টার্মিনাল, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি বিদুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায়। এটা করতে হলে আগামী মেয়াদেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। তা না হলে এসব প্রকল্পের কোনো কোনোটি স্থগিত অথবা যে দল ক্ষমতায় আসবে সে দলই এর সুফল ভোগ করবে বলে মনে করে দলটি।
এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, আগামী মেয়াদটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সরকারের হাতে নেয়া অনেক মেগা প্রকল্প চলতি মেয়াদে শেষ হবে না। ফলে যে সরকার এসব প্রকল্প শুরু করেছে তারা আবার যদি ক্ষমতায় না আসে তা হলে ২০২১ ও ২০৪১ সাল নিয়ে যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয় এবং দেশের মানুষ কিছু পায়।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামীতেও এ দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে। জনগণ দেখছে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের চোখে পড়ার মতো অনেক কিছুই বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করেছে এবং করছে। অনেক বড় বড় প্রকল্প এখন শুধু উদ্বোধনীর অপেক্ষায় আছে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সহায়ক সরকারের বিষয়ে আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন। এটাই আমাদের সাফ কথা। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে এবং শেখ হাসিনা আরেক টার্ম প্রধানমন্ত্রী হবেন। দেশের মানুষও সেটা চায়। এ দেশের মানুষ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলবে, সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।