হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:
উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে পরিদর্শনে আসছেন ১৫টি দেশের ১৯ জন দূত। দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিশেষ আমন্ত্রণে এরা বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলে জানা গেছে। দেশগুলো হচ্ছে বসনিয়া-হারজেগোবিনিয়া, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, ইথিওপিয়া, জর্জিয়া, গ্রিস, মরিশাস, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, ইউক্রেন, জাম্বিয়া, নাইজেরিয়া, চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, গানা, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়া ও ফিজি। তম্মধ্যে ইউক্রেনের দূত আসছেন সস্ত্রীক। দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, উপ-হাইকমিশনার রাকিবুল হকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসময় তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। ইতিমধ্যেই দুতগণ ঢাকায় পৌঁছেছেন। ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবেন। ১৭ ডিসেম্বর তাঁরা কক্সবাজার যাবেন।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা দিল্লিস্থ ১৫টি দেশের ১৯ জন দূত বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাংলাদেশে আবাসিক মিশন নেই এমন দেশগুলোর জ্যৈষ্ঠ এসব কূটনীতিকরা আগামী ১৭ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে সই হওয়া প্রাথমিক চুক্তি বা অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ৩ সপ্তাহ সময়সীমা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। নির্ধারিত ওই সময়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন হয়নি। প্রত্যাবাসন বিষয়ক পরবর্তী চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়েও মিয়ানমারকে পুরোপুরি রাজি করানো যায়নি। পরবর্তী চুক্তির (খসড়া) কয়েকটি ধারায় তাদের জোর আপত্তি রয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তির টার্মস অফ রেফারেন্সে বিস্তৃত পরিসরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব বিষয়ই রাখতে চায় ঢাকা। মিয়ানমার বিষয়টিকে সংকীর্ণ বা ছোট পরিসরে রাখার পক্ষে। তাছাড়া ২৩ নভেম্বর সই হওয়া প্রত্যাবাসন বিষয়ক প্রাথমিক চুক্তির সব উপাদানই পরবর্তী বাস্তবভিত্তিক চুক্তিতে রাখার প্রস্তাব করেছে ঢাকা। এতে এখনও মিয়ানমারের সায় নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলোচনায় মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছেন। পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থো ৬ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন। আগামী মঙ্গলবার তাঁদের সাথে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২৩ নভেম্বর সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় অ্যারেঞ্জমেন্টের শর্ত মতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর জন্য পরবর্তী বাস্তব ব্যবস্থা বা ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হওয়ার কথা। আর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সময় ছিল ৩ সপ্তাহ। কিন্তু কোনটিই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে উভয় দেশের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কাঠামোর বিষয়ে দু’পক্ষ প্রায় অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে কার্যকরি আলোচনা হবে এবং সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক বাস্তব চুক্তি সইয়ের কাঙ্খিত অগ্রগতি হবে।
উল্লেখ্য, ২৩ নভেম্বর সই হওয়া প্রাথমিক চুক্তি মতে দুই মাসের মধ্যে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ফেরানোর কাজ পুরোপুরি শুরু করার ‘বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে। ওদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বর্বর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। সেখানে মিয়ানমার জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া, তাদের ওপর বর্মী নির্যাতন বন্ধ, বাস্তুচ্যুতদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং চলমান রাখাইন সংকটের দ্রুত এবং স্থায়ী সমাধানে ১২ দফা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে ইইউ পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শুরু হলেও ভোটাভুটির ফল জানা যায়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।