১ দালাল এবং ৫ যাত্রী আটক

হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

টেকনাফ থেকে সাগর দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়া আবার শুরু হয়েছে। প্রশাসন এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় গত কয়েক বছর আদম পাচার বন্দ ছিল। বর্তমানে এব্যাপারে যথাযথ নজরদারীর অভাবে বিশেষতঃ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করায় আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। সেই সাথে আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট ফের সংঘটিত হয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সাগর দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্ততিকালে ১ জন দালাল এবং ৫ জন যাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, ১৩ ডিসেম্বর ভোররাতে টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাঞ্চন কান্তি দাশের নেতৃত্বে পুলিশ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাহারছড়া বড়ডেইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাগর দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্ততিকালে ১ জন দালাল এবং ৫ জন যাত্রীকে আটক করেন। ধৃত দালাল হলেন টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বড়ডেইল এলাকার নুরুল আমিন প্রকাশ নুর আলম (৪০)।

মালয়েশিয়াগামী যাত্রীরা হলেন উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের আলী হোসেন (৪৫), রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের তাইংগাকাটা গ্রামের মো: ছৈয়দ হোসেন (৩৯), একই এলাকার মো: আলম (১৬), কুতুপালং আনরেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পের ডি ব্লকের মো: হারুন মিয়া (২০) এবং জিয়াউল হক (১৯)। এঘটনায় টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া বড়ডেইল এলাকার জালাল আহমদের ছেলে আজিজুর রহমান (২৫), ফজল আহমদের ছেলে জালাল আহমদ (৪৯), মৃত ওসমান মিয়ার ছেলে মো: উল্লাহ (৩৫), মো: ইসমাইলের ছেলে মো: বেলাল হোসেনসহ (৩৫) অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জন পলাতক আসামী করা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন খাঁন বলেন ‘ধৃত দালাল ও মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। পলাতক আসামীসহ চিহ্নিত মানব পাচারকারী দালালদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে’।

টেকনাফের উপকুল থেকে দীর্ঘ দিন বন্দ থাকার পর আবারও মানব পাচার শুরু শুরু হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাওঃ আজিজ উদ্দিন বলেন ‘প্রশাসনের কঠোর অবস্থান এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতায় গত কয়েক বছর আদম পাচার বন্দ ছিল। কিন্ত কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ায় অবস্থান করায় আদম পাচারকারী সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত দালালরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় মানব পাচার শুরু হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত দালালরা অসহায় রোহিঙ্গাদের ফুসলিয়ে এবং বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে সাগর দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়া পাচারে উৎসাহিত করছে। শুরুতেই প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ না দালালরা রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়ে টেকনাফের উপকুল থেকে সাগর দিয়ে চোরাইপথে মালয়েশিয়া পাচার আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে’।

এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সামশুল আলম শামীম প্রকাশ কাশুর নেতৃত্বে শাহপরীরদ্বীপে একটি দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়ার আকবর প্রকাশ মাইলু, শফি আলম, কামাল হোসেন, আবদুল গণি, আবদুর রশিদ, মোহাম্মদ হোছন, সৈয়দ হোসেন, ইকুম্মা, নুর মোহাম্মদ মাঝি, মোঃ আলম, নুরুল আলম, ফজল করিম, আবু তাহের, নাজির হোসেন, নুর হোসেন, জাগির হোসেন, জামাল, আবদুল্লাহ, আনু মিয়া, আবদুল করিম। তাছাড়া শাহপরীরদ্বীপ মিস্ত্রীপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার ছলিম, শরীফ হোছন, নুর হোছন, নাজির হোছন, নুরু, রশিদ উল্লাহ, রশিদ আমিন, ইলিয়াছ, মোঃ হাসিম, রসিদ উল্লাহ, শফিক, হাশিম উল্লাহ, এনায়তুল্লাহ, তৈয়ব, কবিরা, মোঃ আলম, রাহমতুল্লাহ ও ইলিয়াসের নেতৃত্বে রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেটে পৃথক ঘাট। অপরদিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দরগাহছড়া এলঅকায় মোঃ ফিরোজ মাঝি, মোঃ আবদুল হামিদ মাঝি, মোঃ হাসান মাঝি, মোঃ আজিম আলী মাঝি, জোবাইর মাঝি, মোঃ হাসান, জোনাইদ ওরফে রোহিঙ্গা মাঝি, মোঃ ইসহাক মাঝি, মোঃ গফুর, গফুরের বাগিনা মোঃ ইসহাক, কাসিম, মোঃ ইউনুছ, ছৈয়দ, মোঃ হাসান, হাজী আবদুল সালাম। এভাবে প্রত্যেক ঘাটেই রয়েছে পৃথক মানব পাচারকারী দালাল সিন্ডিকেট। শুরুতেই এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী বলে মনে করছেন সচেতনমহল।